নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়কপথে পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে ভারতসহ প্রতিবেশী পাঁচ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ধরখার) জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ভারত, ভুটান, নেপাল এবং পূর্ব প্রান্তে মিয়ানমার ও চীনের কুনমিং শহরের অবস্থান। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের সড়কপথে পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিশাল সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের কাছ থেকে নেয়া ঋণ তৃতীয় এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট) থেকে জোগান দেয়া হবে দুই হাজার ৮১০ কোটি টাকা। বাকি চার হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা জোগান দেয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ নিতে বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) ২০০৮ সালে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ হয়ে সড়কপথে পণ্য পরিবহণ নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। ট্রান্সফার ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড লজিস্টিক স্টাডি (বিটিআইএলএস) নামে ওই সমীক্ষায় ভারতসহ এ অঞ্চলের অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আটটি করিডোর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়।
প্রস্তাবিত এ মহাসড়কটি অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। প্রকল্পটি ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নাধীন আশুগঞ্জ নদীবন্দর ও আখাউড়া স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে বলে জানান এমএ মান্নান।
এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ এই প্রকল্পের মেইনটেন্যান্স কস্ট অনেক বেশি। তাই সেই ব্যয় মেটাতে হলে এর চেয়ে কম ভাড়া নেয়ার সুযোগ নেই।’ এই প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা সচিব রশীদ-আল-মামুন বলেন, ‘মেট্রোরেলের যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তা দিয়েও মেইনটেন্যান্স কস্ট উঠবে বলে আমার মনে হয় না। ভর্তুকি লাগবে বলে আমার মনে হয়।’
মন্ত্রী জানান, বৈঠকে কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ধরখার) জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটিসহ আট হাজার ৭৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন
দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে আর দুই হাজার ৮১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জোগান দেয়া হবে।
বাকি প্রকল্পগুলো হলোÑ‘বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশাল (চারকাউয়া) থেকে ভোলা (ইলশা-ফেরিঘাট) হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্তায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। এতে ব্যয় বাড়ছে ১৮৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ (১ম সংশোধিত) ব্যয় বাড়ছে এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা। ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড এলায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্প। ব্যয় ২১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ‘মাশুরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ প্রকল্প। ব্যয় ধরা হয় ৯৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ‘আখাউড়া-আগরতলা-ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)’। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যয় বাড়ানো হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সচিব মো. আবু হেনা মোরশেদ জামান প্রমুখ।