কুয়াশায় বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

প্রতিনিধি, রাজশাহী: হঠাৎ কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চারার গোড়া বা পাতা পচা রোগ এবং হলুদ বর্ণ ধারণ করে বীজতলা দুর্বল হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এদিকে সূর্যের আলো ঠিকমতো না পাওয়ায় বোরোর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তবে বোরোর চারা রক্ষায় কৃষকদের পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ অঞ্চলের বীজতলা উঁচু জমিতে হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো পরিবেশ হয়নি। প্রতিদিনই তারা মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর রাখছেন এবং কৃষকদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার রাজশাহী জেলায় বোরো ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবার বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বীজতলা তৈরি হয়েছে চার হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে, যা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলা-উপজেলায় বিক্রি করতে পারবেন এখানকার চাষিরা।

এবার শীত ও কুয়াশা অপেক্ষাকৃত কম থাকায় শুরুর দিকে বীজতলায় চারা সঠিকভাবে বাড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে বীজতলা নিয়ে শঙ্কা আছেন চাষিরা। বীজতলা নষ্ট হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বোরো আবাদের ওপর বলে মনে করেন কৃষকেরা।

কৃষকেরা জানান, এক সপ্তাহ ধরে শীত ও কুয়াশা জেঁকে বসেছে। গত তিন দিন প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল। দেরিতে সূর্যের দেখা পাওয়া গেলেও সারাদিনই ছিল নিভু নিভু।

সরেজমিনে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চাষিরা বীজতলার বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন। কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, আবার কেউ বীজতলায় পানি ও বালাইনাশক প্রয়োগ করছেন। শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষা পেতে অনেক কৃষক বিকাল থেকেই বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন।

চার বিঘা জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন চারঘাট উপজেলার কৈডাঙা গ্রামের কৃষক আল মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, নিজের পাঁচ বিঘা জমিতে চারা রোপণ করব। আর বাকি চারা বাজারে বিক্রি করব। উঁচু জমিতে বীজতলা করার কারণে শীতে বীজতলা নষ্ট কম হচ্ছে, কিন্তু পানির সংকটে পড়েছে বীজতলা। প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে, তাতে খরচ আরও বাড়ছে।

তানোর উপজেলার বাঁধাইড় গ্রামের কৃষক বারিউল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত ও কুয়াশায় বীজতলার চারাগুলো হলুদ রং ধারণ করেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বীজতলা পরিচর্যা করছি, কিন্তু চারা সেভাবে বড় হচ্ছে না। ৫০ কেজি ধানের বীজ জমিতে ছিটিয়েছি। তার মধ্যে ২০ কেজি ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আবার লাগাতে হচ্ছে। এতে খরচও বেড়ে গেছে। চারা নষ্ট হয়ে জমিতে সময়মতো রোপণ করতে না পারায় দেরিতে ফসল ফলবে। কালবৈশাখী ঝড়ের আগে ঘরে তুলতে না পারলে মাঠে পাকা ধান নষ্ট হতে পারে, এমন আশঙ্কা এই কৃষকের। এছাড়া আগেভাগে বাজারে তুলতে না পারলে ভালো দাম না পাওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

গোদাগাড়ী উপজেলার এক কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, কত দিনে ধান লাগানো শেষ হবে, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নই আমরা। আমরা যদি দেরি করে ধান রোপণ করি, তাহলে ফসল উৎপাদনও দেরিতে হবে। মৌসুমের শেষে ধানের দাম কমে যায়। তাতে দেখা যাবে, আমরা কাক্সিক্ষত দাম পাব না। বোরো ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশায় বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করতে হবে। যারা পৌষের শুরুর দিকে বীজতলায় বীজ ফেলেছে, তারা বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। কুয়াশা কমছে না, তাই দুশ্চিন্তায় আছি।

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, শীত ও কুয়াশার কারণে কিছু বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কাদামাটির বীজতলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই আবহাওয়ায় করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জমিতে পানি রাখা এবং কুয়াশা বেশি হলে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে বীজতলা নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই বলে জানান।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, শীত ও কুয়াশায় রাজশাহীতে এখনও বোরোর বীজতলার তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে ক্ষতি প্রতিরোধে কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া এবং রাতে টিউবওয়েলের গরম পানি ছিটিয়ে দিতে বলা হচ্ছে। এতে শীত ও কুয়াশার কবল থেকে রক্ষা পাবে বোরোর বীজতলা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, যদি বৈরী আবহাওয়া ও কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে প্রাকৃতিকভাবে বীজতলার ক্ষতি হবে। কিন্তু বর্তমানে আবহাওয়া যে অবস্থায় আছে তাতে ভালো রোদ পেলে বীজতলা ঠিক হয়ে যাবে। চারার বৃদ্ধিতে নিম্ন তাপমাত্রার প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য ঘন কুয়াশা ও বেশি শীতের সময়ে বোরো ধানের বীজতলা সকাল ১০টা থেকে সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে সন্ধ্যার আগে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় পানি সেচ দিয়ে বীজতলার চারা ডুবিয়ে দিতে হবে এবং সকালে সেই পানি বের করে দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে দড়ি টেনে দিয়ে বীজতলার চারায় জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০