কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার মিরপুরে আখ চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন দুই সহোদর রাকিব হোসাইন ও মো. আজিম। উপজেলার চিথলিয়া মাঠে সাড়ে চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আখ চাষ করেছেন ওই দুই যুবক। ভালো ফলন এবং দামে এখন খুশি তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় এক হাজার ৪৬৭ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মিলিং আখ এক হাজার ১৫২ হেক্টর এবং ননমিলিং আখের চাষ হয়েছে ৩১৫ হেক্টর জমিতে।
রাকিব হোসাইন বলেন, ‘আমি একজন তরুণ উদ্যোক্তা। যশোর থেকে আমার বাবার এক বন্ধুর মাধ্যমে আখ চাষ সম্পর্কে জানতে পারি। এরপর আমার ভাইকে নিয়ে চিথলিয়া মাঠে সাড়ে চার বিঘা জমি বর্গা নিই। প্রায় ১০ মাস আগে যশোর থেকে বিজ সংগ্রহ করে গেণ্ডারি জাতের আখ রোপণ করি। সাড়ে চার বিঘা আখ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা।’
তিনি জানান, জমি বর্গা নিতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া বিজ কেনা, শ্রমিক, সার, সেচ প্রভৃতি দিয়ে বিঘা প্রতি আখ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার ক্ষেতে প্রায় ৬০ হাজার পিস আখ রয়েছে। প্রতি পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বাজারে পাইকারি দামে বিক্রি করছেন। যদি প্রতি পিস ৩০ টাকা হারে বিক্রি করা যায় তবে ৬০ হাজার পিসের দাম দাঁড়ায় ১৮ লাখ টাকা। সেক্ষেত্রে প্রায় ১৪ লাখ টাকা লাভ হবে বলেও জানান তিনি।
তরুণ এ আখ চাষি জানান, এ ফসলটি রোপণের ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে উত্তোলন করা যায়। এখন বাজারে আখের ব্যাপক চাহিদা। প্রতি পিস বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। বাজার চাহিদার কারণে দামটাও তুলনামূলক বেশি। যদি এমন ভালো দাম পাওয়া যায় তবে আরও বেশি লাভ হবে। আখে খুব একটা রোগবালাই হয় না। শুধু একটি পোকা ছিদ্র করে নষ্ট করে ফেলে। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে কিটনাশক ব্যবহার করে এটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।
রাকিবের ভাই আখ চাষি মো. আজিম বলেন, ‘অনেকদিন দেশের বাইরে ছিলাম। ওখানে থেকে তিন-চার লাখ টাকা খরচ করে কোনো আয় হয়নি। এরপর অন্য আবাদ করেও লাভ দেখিনি। শেষে আখ চাষের পদক্ষেপ নিই। এখন দেখছি এটি খুব লাভজনক। আশা করি এখান থেকে অনেক সুফল পাব।’
আজিম আরও বলেন, ‘চার বছর দেশের বাইরে ছিলাম। কিন্তু কিছু করতে পারিনি। দেশে ফিরে আখ চাষের সিদ্ধান্ত নিই। ইতোমধ্যে আমাদের আখ বিক্রি শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এর মাধ্যমে ভাগ্য বদল করতে পারব।’
স্থানীয় চিথলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস আলী পিস্তল বলেন, এই অঞ্চলে গেণ্ডারি আখের বেশ কদর। বর্তমানে দামও বেশ ভালো। এ দুই তরুণ দারুণ কাজ করেছেন।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কুষ্টিয়া জেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ১৫২ হেক্টর জমিতে মিলিং আখ আর ৩১৫ হেক্টর জমিতে গেণ্ডারি আখের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর উপজেলাতে প্রায় তিন একর জমিতে গেণ্ডারির চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে গেণ্ডারি চাষ করে প্রায় চার লাখ টাকা মুনাফা পেয়েছেন চাষিরা।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে কৃষি একমাত্র শেষ আশ্রয়স্থল। কৃষিকে অবলম্বন করে আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী হতে পারেন। তরুণ উদ্যক্তা হিসেবে আখ চাষ নিঃসন্দেহে প্রশাংসার দাবি রাখে। এখানে কিছু জমিতে তামাকের আবাদ হয়। তামাকের বিকল্প হিসাবে তরুণ উদ্যোক্তারা আখ চাষ করে আরও বেশি লাভবান হতে পারেন।’