কুষ্টিয়া চিনিকলে টানা তিন মৌসুম আখ মাড়াই বন্ধ

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া :টানা তিনটি মৌসুমে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কুষ্টিয়া চিনিকলের। এতে বিনষ্ট হাওয়ার পথে মিলের ভারী মেশিনারিজ ও বৈদ্যুতিক মোটরসহ শতকোটি টাকার স্থাপনা। এদিকে কয়েক বছর মিল বন্ধ থাকায় বেতন-ভাতা না পেয়ে কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা মৌসুমজুড়ে বন্ধ থাকায় কুষ্টিয়ার চিনিকলের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ ও সুনসান নীরবতা। এককালের জৌলুসপূর্ণ এই মিলে এখন নেই কর্মব্যস্ততা ও প্রাণের কলরব। মিলের প্রায় শতাধিক কোয়ার্টার এখন পরিত্যক্ত। বাউন্ডারি ঘেরা মিলের ২২১ দশমিক ৪৬ একর জায়গাজুড়ে ঘাস, লতাপাতা ও গুল্মে সয়লাব। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মিল ভবন ও টিনের ছাউনিসহ অন্যান্য স্থাপনা, আখ পরিবহনে ব্যবহƒত অনন্ত ১৫-২০টি লরি, মিলের সুউচ্চ চিমনি, ভারী মেশিনারি ও বৈদ্যুতিক মোটরসহ শতকোটি টাকার যন্ত্র বিনষ্টের উপক্রম। জনবল কাঠামো অনুযায়ী কুষ্টিয়া চিনিকলে এক হাজার ১৩৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে এখন মাত্র ২৬ কর্মচারী বেতন ছাড়াই মিল রক্ষায় নিয়োজিত। অন্যরা কর্ম হারিয়ে পরিবার-পরিজনসহ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এদিকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নির্দেশে কুষ্টিয়ার জগতি চিনিকলে ২০১৯-২০, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ মৌসুম থেকে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ মিলে দৈনিক মাড়াই ও উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ও বার্ষিক মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বন্ধের তিন বছর পরও মিলটি চালুতে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় মিল জোনের আওতায় আখ উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে কুষ্টিয়া জোনের আওতায় চাষকৃত আখ মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোং চিনিকলে সরবরাহ করছেন চাষিরা।

মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বকেয়া ১২ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়টিও ঝুলে আছে দীর্ঘকাল। সম্ভাবনাময় এই মিলটিকে রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। এদিকে মিল বন্ধে শ্রমিক-কর্মচারীদের চরম দুর্ভোগসহ স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এর আগে মিল বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার জগতি নামক চিনিকলটি চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলগেটে কয়েক দফা বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন।

কুষ্টিয়া চিনিকলের কর্মচারী আতিয়ার রহমান ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. শফি উদ্দিন চরম আক্ষেপ করে জানান, মিলের উপার্জনের ওপরই তাদের সংসার ও জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। বেতন ছাড়াই এখন খেয়ে-না খেয়ে তারা মিল আঁকড়ে ধরে আছেন। মিলটি আবার চালু হবে, এটাই তাদের একমাত্র আকুতি।

কুষ্টিয়া চিনিকলের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানান, আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণার পর থেকে সীমিত পরিসরে মিলের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। তবে বন্ধ এই মিলে আখ মাড়াই চালু ও চিনি উৎপাদনে সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে কুষ্টিয়া শহরের অদূরে জগতি এলাকায় ২২১ দশমিক ৪৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া চিনিকল। ১৯৬৫-৬৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে মিলে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীকালে ১৯৬৬-৬৭ সালে মিলটিতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় চিনি উৎপাদন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০