কুষ্টিয়ার তিলের খাজা

কেবল উদরপূর্তিই নয়, একে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা বরাবরই ছিল, আছে বাঙালির চিন্তায়, রুচিতে। খাওয়ার পদবৈচিত্র্য তাই এ জনপদজুড়ে। দেশের নানা স্থানের বিশেষ বিশেষ খাবারের কথা জানাচ্ছেন মীর মাইনুল ইসলাম

উৎসব মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে মিষ্টি। হরেক পদের মিষ্টিজাতীয় খাবার না থাকলে যেন বাঙালির উৎসব পূর্ণতা পায় না। শিশু থেকে বৃদ্ধ কে না এ ধরনের খাবার পছন্দ করেন! এ চাহিদা মেটানোর জন্য দেশের প্রায় সব অঞ্চলে গড়ে উঠেছে জমজমাট মিষ্টিজাতীয় খাবারের ব্যবসা। অঞ্চলভেদেও দেখা যায় মিষ্টির ভিন্নতা। তিলের খাজা তেমনি একটি মিষ্টান্ন।

 

ইতিহাস

তিলের খাজার কথা বললেই চলে আসে কুষ্টিয়ার কথা। কুষ্টিয়ার তিলের খাজা দেশজুড়ে বিখ্যাত। নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে। এ মিষ্টান্নের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রথম আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়া অঞ্চলে। ওই অঞ্চলে বসবাসরত পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা খাবারটি তৈরি করতো। ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পর কুষ্টিয়া শহরের দেশওয়ালীপাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার তিলের খাজা তৈরি শুরু করে। স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়া শহরের চরমিলপাড়া কল এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে তিলের খাজা তৈরির কারখানা। তখন থেকেই তিলের খাজার নাম ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে দেশের নানা স্থানে এ মিষ্টান্ন তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। জানা যায়, এসব কারখানায় কারিগররা খাজা তৈরির প্রক্রিয়া শেখেন কুষ্টিয়া থেকে। সারা বছর তৈরি হয় তিলের খাজা। তবে শীত মৌসুমে এর কদর বেড়ে যায়।

 

উপাদান

সম্পূর্ণ হাতে তৈরি হয় তিলের খাজা। মেশিনের সহায়তা নেওয়া হয় না। প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক কেজি চিনি, ৩০০ গ্রাম তিল, ১০০ গ্রাম তরল দুধে পরিমাণমতো পানি দিয়ে এক কেজি খাজা তৈরি করা যায়। এক কেজি খাজা বিক্রির পর লাভ থাকে চার টাকার মতো।

সুস্বাদু খাজা তৈরির প্রধান উপকরণ তিল ও চিনি। গনগনে আগুনের তাপে পানি ও চিনির মিশ্রণ দিয়ে শিরা তৈরি করা হয়। চিনির এ শিরা ঠাণ্ডায় জমাট বাঁধানো হয়। এরপর শিংয়ের মতো দো-ডালা গাছের সঙ্গে হাতে টানা হয় এ শিরা। এক পর্যায়ে বাদামি থেকে সাদা রঙে পরিণত হলে কারিগররা বিশেষ কায়দায় হাতের ভাঁজে ভাঁজে তা টানতে থাকেন। তখন এর ভেতরে এক ধরনের ফাঁপা আকৃতি তৈরি হয়। শিরা টানা শেষে নির্দিষ্ট মাপে কেটে তাতে মেশানো হয় খোসা ছড়ানো তিল। এভাবেই তৈরি হয় মজাদার তিলের খাজা।

 

খোঁজ-খবর

শীত মৌসুমে কুষ্টিয়ার প্রত্যেক কারখানায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কেজি খাজা তৈরি হয়। একটি কারখানায় আট থেকে ১২ জন লোক কাজ করেন।

 

ভবিষ্যৎ

কুষ্টিয়া ও কুষ্টিয়ার বাইরে অনেকে খাজা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। স্বল্প আয়ের কারণে খাজা তৈরির শ্রমিকরা সুখের মুখ দেখতে পারছেন না। এছাড়া অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সরকার এ খাতে সুনজর দিলে দেশের অন্যতম একটি ঐতিহ্য রক্ষার সঙ্গে হাজারো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবেÑএমনই মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০