শেয়ার বিজ ডেস্ক: চরাঞ্চলে সাধারণত আষাঢ়-ভাদ্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্যা থাকে। সেই বন্যা মোকাবিলা ও ফসলের আবাদ নিয়ে আলাদা প্রস্তুতি থাকে। তবে এবার এ দুই মাসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোতে বন্যা দেখা দেয়নি। তবে হঠাৎ করে এ আশ্বিনে বন্যা দেখা দিয়েছে। খবর: প্রথম আলো
কয়েক দিনের ব্যবধানে হুহু করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় পানি উপচে চরাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে ওই দুই ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের ৫০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ সেন্টিমিটার করে পানির উচ্চতা বাড়ছে। এতে চরম দুর্ভোগে আছে ওই বাসিন্দারা। মাঠের ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও সরকারি বা বেসরকারিভাবে ওই সব অঞ্চলে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা মেলেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, গত সাত দিনে পানির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। পদ্মার বিপদসীমা নির্ধারণ আছে ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সেখানে গত শুক্রবার পানির উচ্চতা ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, যা সতর্কবার্তা।
কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুণ্ডু জানান, হঠাৎ পানি বাড়ছে। এ সময়ে এর আগে এভাবে পানি বাড়েনি। আরও দু-এক দিন পানি বাড়ার পর কমতে পারে। উজানে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় ভারত ফারাক্কা বাঁধের বেশিরভাগ গেট খুলে দেওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আষাঢ়-ভাদ্র মাসের বন্যা না হওয়ায় তারা অনেকটা আশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ২০ সেপ্টেম্বর এলাকায় পানি প্রবেশ করতে থাকে। ধীরে ধীরে ক্ষেত তলিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে গত ছয় দিনে ক্ষেত ডুবে পানি ঘরের আঙিনায় ঢুকে পড়ে। গত বুধবার পর্যন্ত ওই দুই ইউনিয়নের অন্তত ৩৫টি গ্রাম পুরোপুরি পানিতে প্লাবিত হয়। এসব এলাকায় এখন একমাত্র চলাচলের বাহন নৌকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বাসিন্দারা। দুই ইউনিয়নের সব কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। হাটবাজারেও পানি উঠে গেছে। বাড়ির ভেতরে ও আঙিনায় পানি প্রবেশ করায় পোকামাকড় ও সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে।
গত বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নৌকায় ঘুরে বন্যার বিষয়টি সরেজমিন দেখা হয়। এ সময় মুন্সীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা নৌকার মাঝি শওকত আলী বলেন, গত ৮-৯ বছরের মধ্যে এ সময়ে এত পানি বাড়া দেখা যায়নি। এবারই এ সময়ে পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে। তিনি নৌকায় করে কেনা খাবারসহ অনান্য জিনিস ডুবে যাওয়া বাড়ির বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, হঠাৎ বন্যায় অন্তত ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির মাষকলাই নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ১১ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। ভবিষ্যতে তাদের বিশেষ সুবিধার আওতায় না নেওয়া হলে ক্ষতির মুখে থাকবেন তারা। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, ইউনিয়নের ১৯ গ্রামের মধ্যে ১৭টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করতে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।