কুষ্টিয়ায় বেড়েছে বোরো আবাদে খরচ, বিপাকে চাষিরা

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় বোরো আবাদে কৃষকদের ব্যয় আগের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ডিজেল, সার, বীজ, কীটনাশকসহ শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় এবার অনেক কৃষকই বোরো আবাদ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। উৎপাদনে ব্যয় বাড়ায় সামনে ধানের বাজার আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার হেক্টর। ইতোমধ্যে কৃষকরা মাঠ প্রস্তুত করে বোরো চারা রোপণ শুরু করেছেন। অনেক কৃষক ধান রোপণ শেষে পরিচর্যা করছেন। বাকিরা বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করছেন। তবে বোরো আবাদের শুরুতেই এবার কৃষকদের গাঁট থেকে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে। বিশেষ করে ডিজেলের দাম বাড়ায় পানির খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি বীজ, সার ও শ্রমিকের পেছনে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে কৃষকদের।

সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম হোসেন বলেন, এ বছর ২৬ কাঠা জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চারা রোপণ শেষ করে পরিচর্যা শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এবার বোরো চারা কেনা থেকে শুরু করে জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ সব খানেই গত বছরের তুলনায় বেশি ব্যয় হয়েছে। গতবার একনল চারা কিনেছিলাম মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে। এবার সেই একনল চারা কিনেছি ২০০ টাকা দিয়ে। শুধু চারা কিনতে বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর একবার চাষ দিতে ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে। ট্রাক্টর দিয়ে ৪ বার জমি চাষ দিতে গুনতে হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা।’

জানা যায়, গত বছর তেলের লিটার ছিল ৬৫ টাকা, এবার তা ৮০ টাকা। ২৬ কাঠায় জমি প্রস্তুত ১০ লিটার তেল খরচ হয়েছে। গ্রামের খুচরা দোকানে ৮০ টাকার তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা লিটার। ৮৮৪ টাকার তেল কিনতে হয়েছে। তেলে প্রায় ২০০ টাকা বেশি লেগেছে। এরপর জমিতে মই দিতে ৩০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ধান লাগাতে শ্রমিকরা মজুরি নিচ্ছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে চারা রোপণ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা। গতবার এ খরচ ছিল ১ হাজার ২০০ টাকার মতো। সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫৮৪ টাকা।

তিনি বলেন, ‘খরচ সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এতে বোরো আবাদ অনেক চাষি করেননি।’

একই গ্রামের কৃষক চাঁদু ম-ল বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে তেল, সার ও বীজ পাওয়া যায় না। গ্রামের কৃষকদের বাজার তুলনায় বেশি দামে কিনতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া কোনো সারই গ্রামের বাজারে নির্ধারিত দরে বিক্রি হয় না। এ ছাড়া সরকার প্রতি লিটার তেলের দাম বাড়িয়েছে ১৫ টাকা, সেই তেল খুচরা পর্যায়ে এসে আরও ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’

গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়নের নরহরদিয়া গ্রামের কৃষক গনি মালিথা বলেন, বোরো আবাদে এবার খরচ বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে শ্রমিকের খরচ। ধান লাগাতে ৩০০ টাকায় পাওয়া গেলেও এলাকাভেদে এবার সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি লাগছে।

কৃষকরা জানান, এক বিঘায় বোরো আবাদ করে ফলন পাওয়া যায় গড়ে ২০ মণ। বাজার ভালো থাকলে প্রায় ২০ হাজার টাকা ধান বিক্রি করে পাওয়া যায়। আর বিছালি বিক্রি করে পাওয়া যায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে আয় ২৫ হাজার টাকার মতো। তবে খরচ বেড়ে গেলে লাভের পরিমাণ কমে যাবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের। সেখানে অন্য ফসল আবাদ করে কৃষক দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন।

এ অবস্থায় সেচ খরচ বাঁচাতে জেলার তিন উপজেলার কৃষকরা জিকের পানির ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে পুরো মৌসুমে জিকের পানি পেলে তাদের সেচ খরচ সাশ্রয় হবে। জিকের পানি দিয়ে এক বিঘা জমি আবাদ করতে কৃষকদের ব্যয় হয় মাত্র ২০০ টাকা। এবার তেলের বাড়তি দামের কারণে অনেক কৃষক জিকের পানি দিয়ে আবাদ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান, গত বছর একটি পাম্প অচল ছিল। এবার সেই পাম্পটি সচল করা হয়েছে। দুটি পাম্প সচল রয়েছে। পানির কোনো সমস্যা হবে না। কুষ্টিয়াসহ তিন জেলার কৃষকরা জিকের পর্যাপ্ত পানি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্যানেলেই এখন পানি রয়েছে। কৃষকরা সেই পানি দিয়ে আবাদ করছে।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বিষ্ণু পদ সাহা বলেন, এবার বোরো রোপণের লক্ষ্য ৩৫ হাজার হেক্টরের সামান্য বেশি। ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বাকিটাও অর্জিত হবে বলে মনে করি। তবে গতবারের তুলনায় এবার উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে, তারপরও ধান আবাদে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০