কুসংস্কার বন্ধ হওয়া জরুরি

কুসংস্কার হলো অযৌক্তিক, যে কোনো বিশ্বাস বা অভ্যাসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এটির অযৌক্তিকতার নানা ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে বিজ্ঞান এবং বাস্তবতার কোনো কার্যকারিতা নেই, এমনকি এগুলো শরিয়তসম্মতও নয়। আদিকাল থেকে শুরু করে সভ্য সমাজে এসেও কুসংস্কার মানবসমাজে খুবই যতœ সহকারে লালিত হচ্ছে। একসময় দেখা যাবে এভাবে শতাব্দী থেকে শতাব্দী পর্যন্ত এর মিথ্যা প্রভাব বিস্তার লাভ করে যাবে। সভ্যতার মানোন্নয়নের অগ্রযাত্রা বহুগুণ এগিয়ে থাকলেও মানুষ এখনও কুসংস্কার থেকে বের হতে পারিনি। আদিকালে মানবজাতি গুহা বসবাস করা শিখেছে, তারপর গুহা থেকে বের হয়ে বস্ত্র পরিধান করা শিখেছে। ধীরে ধীরে সভ্যতাকে চিনতে পেরেছে, বুঝতে শিখেছে। অথচ বহু শতাব্দী পার করে এসেও কুসংস্কার থেকে বের হতে পারিনি। আজ মানবজাতি পরিমিতমধ্যে জীবনযাপন করলেও অঞ্চলভিত্তিক এবং দেশের নানা প্রান্তে অনেক মিথ্যাচর্চার কুসংস্কার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মানুষ সেসব কুসংস্কারের মধ্যে আদি যুগের গুহা বসবাস করা মানুষের মতো করে বসবাস করে চলেছে।

পূর্ব শতাব্দীর কত-শত মানুষের তৈরি ভ্রান্তিকর কুসংস্কারের ছড়াছড়িতে ভরপুর দেশ, সমাজ এবং আমাদের সভ্যতা। পড়ে যাওয়া দাঁতকে ইঁদুরের গর্তে রাখলে কচকচে চিকন সাদা দাঁত গজাবে, কালো মেঘের নিচে সাদা বক উড়ে গেলে ভারী বর্ষণ হতে পারে, কোনো ব্যক্তির আলোচনা-সমালোচনা করার সময় সে ব্যক্তি সহসা সামনে এলে অনেক বছর বাঁচবে, ঘরের এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বের হলে অমঙ্গল হওয়ার আশঙ্কা প্রভৃতি সামাজিক ব্যাধি অনুযায়ী লোকবচন হলো, মেয়েদের বেশিদিন ঘরে রাখা ঠিক নয়। বিয়ে দিয়ে দিতে হয়, বয়স যা হওয়ার আছে হোক। প্রয়োজনে ভুয়া নিবন্ধন সনদ তৈরি করে হলেও বিয়ে দিয়ে দেয়া ভালো। তা না হলে সমাজের চোখে ভালো মানাবে না।

সমাজের চোখে ভালা মানাবে না, এই ভালো না মানানোটার কারণ কী? একজন নারী যতই ভালো করে জীবনযাপন করুক না কেন এই সমাজের বাঁকা চোখ থেকে তার নিস্তার নেই। একটা খারাপ পরিস্থিতি গড়ে উঠতে বেশিদিন লাগে না, কিন্তু একটি ভালো পরিস্থিতি গড়ে উঠতে অনেকদিন সময় লাগে। গান-নাচের অনুষ্ঠানে বেশি মানুষ আমন্ত্রণ করা লাগে না, এমনিতেই বহু মানুষের ভিড় জমে। গ্রামাঞ্চলের পরিবেশে অথবা শহরাঞ্চলেও এসব দেখা যায়। কিন্তু যদি একটি শিক্ষণীয় কোনো মানসম্মত এবং জীবন ও বাস্তবমুখী উপস্থাপনার জন্য হাতজোড় করে আমন্ত্রণ করেও মানুষ জোগাড় করা যায় না। অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়।

এসব কুসংস্কার ইসলাম এবং বিজ্ঞানে কোনো রকমের যুক্তিকতা নেই এবং এসব কার্যকলাপ শরিয়তেরও বাইরে। মানুষ রীতিনীতির অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে সামনে পা রাখে, ধীরে ধীরে কোনো অযুক্তিকে মান্য করা শুরু করলে সময়ের পরিবর্তে তাও যুক্তিতে পরিণত হবে। এর শেষ যেন কোনোকালেই সমাপ্ত নয়! মানবসভ্যতার প্রভাময় বিকাশের মাধ্যমে এর নাশ করা সম্ভব। অন্যথায় কুসংস্কার ব্যাধি অমরত্ব নিয়ে আজীবন পৃথিবীর মানুষের মাঝে হাস্যকর একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে।

কুসংস্কার মুক্ত একটি পৃথিবী গড়ে ওঠলে দেখা যাবে, মানুষ একটি আবর্জনার মধ্যে নিজেকে আগলিয়ে রেখেছিল। তথাকথিত মানুষের ভুলভাল প্রথা মেনে এগিয়ে যাওয়ার পেছনে তেমন কোনো মর্ম নেই, চর্মরোগের মতো এটি মানুষের অহেতুক ব্যাধি ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব, আমাদের কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আলোকিত পৃথিবীর পথ ধরে।

এম এ জিন্নাহ

শিক্ষার্থী, নোয়াখালী সরকারি কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০