আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে অসময়ের হঠাৎ বৃষ্টিতে তিস্তায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, যেকোনো মুহূর্তে বাপ-দাদার স্মৃতিমাখা বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যেতে পারে। গত তিন দিনে নদীর গর্ভে চলে গেছে ছয়টি বসতবাড়ি। হুমকিতে রয়েছে আরও ৭০টি বাড়ি।
জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মণ্ডলপাড়া গ্রামের মৃত শরাফত মাস্টারের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (৫৬) হতাশা ব্যক্ত করে জানান, ‘গতবার নদী বাড়িভিটা সউগ খায়া গেইল। হালের গরু বিক্রি করি নতুন বাড়ি করনু। এবারো ভাঙন নাগছে। কামলা দিয়া খাং। এ বাড়ি গেইলে করিম কি। মোর পকেটোত বিষ খাওয়ার মতো টেকা নাই।’
জানা যায়, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এ তিন দিনে ভেঙেছে ৬টি বাড়ি। হুমকিতে রয়েছে আরও ৭০-৮০টি বাড়ি।
ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, বর্ষা আসার আগেই হঠাৎ করে ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আধাপাকা বোরো ধানক্ষেত। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৮টি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসাসহ শত শত বিঘা আবাদি জমি। বর্তমানে এ ইউনিয়নে গতিয়াসাম, রামহরি, কালিরহাট ও মেদনীপুর গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। তারা বলছে এ মুহূর্তে তাদের কাছে কোনো বাজেট নেই।
কুড়িগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে আগ্রাসী তিস্তা নদী। প্রায় ৪০ কিলোমিটারব্যাপী এ নদীটির ভাঙনকবলিত বাম তীরে মাত্র ৫ কিলোমিটার জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকি ৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত নদীর অনেক জায়গায় চলছে এখন ভাঙন। গত তিন দিনে বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘার পর বিঘা বোরো ধান, ফলদ ও কাঠের গাছসহ ভেঙে যাচ্ছে বিল্ডিং বাড়ি। এখন হুমকিতে রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার।
গত কয়েক বছর ধরে তিস্তার ভয়াবহ আগ্রাসনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, মন্দির, ডাংরারহাট, রামহরি, পাড়ামৌলা ও গাবুর হালান গ্রামের একাংশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরো গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে আসছে এখানকার আকাশ-বাতাস। মেগা প্রকল্পের নানান আশ্বাসের পর নদীভাঙনের হুমকিতে থাকা মানুষ এখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক জানান, আমার ৭ ও ৮নং ওয়ার্ড চরম হুমকিতে রয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গিয়েছি। তাদের কোনো বাজেট নেই বলে তারা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ আমাদের ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে বাঁচান। নাহলে আমরা বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হঠাৎ বৃষ্টির ফলে তিস্তায় অরক্ষিত এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও এখনো প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ আছে জানালেও পাউবো থেকে ভাঙন প্রতিরোধে নতুন ভাঙনকবলিত এলাকায় এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়নি।