আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের যত্রতত্র গড়ে উঠছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। এসব চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবার নামে প্রতিনিয়তই প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা। ক্লিনিকগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ছড়াচ্ছে পরিবেশদূষণ।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের বাসস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশকিছু প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে সেবা ক্লিনিক, ধরলা ক্লিনিক, কুড়িগ্রাম ক্লিনিক, খান ক্লিনিক ও পপুলার হাসপাতাল বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে। এছাড়া উলিপুরে ডক্টরস কমিউনিটি ক্লিনিক, নাগেশ্বরী জনতা ক্লিনিক, ভূরুঙ্গামারীর সীমান্ত ক্লিনিকসহ সব উপজেলার যেনতেন মানের বেশকিছু ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। জেলা শহরে নতুন করে গড়ে উঠেছে সেন্ট্রাল ক্লিনিক, আইডিয়াল ক্লিনিক, আল নাসির ও গুড হেলথ ক্লিনিক। কুড়িগ্রাম শহরে অনেক দিন ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে শাপলা, হক ও ডেল্টা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নতুন গড়ে উঠেছে নিউ ল্যাব এইড, সিটি ল্যাব, আল আমিন, রাবেয়া, এ্যাপোলো, আরব প্রভৃতি নামে কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নির্মীয়মাণ রয়েছে আপডেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
অনেক রোগী ও অভিভাবক জানান, আমরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে কুড়িগ্রাম জেলা শহরে আসি। এই শহরের তেমন কোনো রাস্তা চিনি না এবং মানুষজনের সঙ্গেও পরিচয় নেই। হাসপাতালের গেটের কাছে আসতেই আমাদের দিকে এগিয়ে আসে কিছু মানুষ। অসুখের কথা শুনে তারা বলে, ‘আপনার যে সমস্যা সে চিকিৎসা হাসপাতালে নেই। আসুন আমার সঙ্গে।’ এভাবেই আমরা পড়ে যাই দালালের খপ্পরে। কুড়িগ্রাম শহরে নতুনভাবে গড়ে ওঠা নামমাত্র ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেস্টের রিপোর্টগুলো রংপুর অথবা ঢাকা গিয়ে ভুল ও ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়।
ডা. লোকমান হাকিম উলিপুরের গাজী মার্কেটের নিচ ও ওপরতলা ভাড়া নিয়ে কয়েক বছর ধরে ডক্টরস কমিউনিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ক্লিনিকের পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য অপরিকল্পিতভাবে মার্কেটের চারদিকে ফেলায় আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। পার্শ্ববর্তী জাকির হোসেনের পরিবারসহ পাঁচটি পরিবার ক্লিনিকের প্রচণ্ড দুর্গন্ধে ও বর্জ্যে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে লোকমান হাকিম জানান, আমরা কয়েক বছর ধরে ক্লিনিকের কার্যক্রম চালাচ্ছি। ক্লিনিকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পয়োনিষ্কাশনের বিষয়ে সব সময় সজাগ থাকি। পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অপরদিকে শাপলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মোকছেদুর রহমান জানান, সরকারি হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসার ঘাটতি পূরণে সহযোগিতা করছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। আমরা প্রতারণা ও হয়রানিমূলক কোনো কার্যক্রম করি না।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সরকারিভাবে চিকিৎসাসেবার মান অনেক উন্নত। সরকারি মূল্যে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়ে থাকে। কোনো রোগী যদি সরকারি সুবিধা না নিয়ে প্রাইভেটে চিকিৎসা করাতে চায়, এতে তার বলার কিছুই নেই। কুড়িগ্রাম জেলা ও উপজেলা শহরের যত্রতত্র গড়ে ওঠা নি¤œমানের অপরিকল্পিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
কুড়িগ্রামে যত্রতত্র ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার
