নিজস্ব প্রতিবেদক: দেরিতে হলেও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদ দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের। আর সেই সমাধান কূটনৈতিকভাবে হবে বলেও মনে করছেন তারা। গতকাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক ওয়েবিনারে দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা এ ধরনের মন্তব্য করেন।
‘রোহিঙ্গা সমস্যা: পশ্চিমা, এশিয়ান এবং দ্বিপক্ষীয় প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সমস্যার সমাধান হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেলে একজন মানুষের হƒদয় ভেঙে যাবে তাদের ওপর বার্মিজ বাহিনীর বর্বরতা দেখে। তবুও আমরা আশা রাখছি কূটনৈতিক পদ্ধতিতেই এ সমস্যার সমাধান হবে। আর এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ একা নয়। আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন পর্যন্ত ৯৫১ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের সহায়তা বাংলাদেশের প্রতি আমাদের অব্যাহত থাকবে। ’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় মিয়ানমারকে সমর্থন করেছে। সেই ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘের যেকোনো রেজ্যুলেশনে সব সময় মিয়ানমারের পক্ষে বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছে। ত্রিপক্ষীয় যেকোনো সমস্যায় বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজেছে। আগেও দু’বার রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই পদ্ধতি সফল হয়েছে, কিন্তু এবার হয়নি। মিয়ানমার শুরু থেকেই সময়ক্ষেপণ করে আসছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি’কে দু’বার বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আসেননি। তারপরও বাংলাদেশকে কূটনৈতিক পদ্ধতিতে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করে যেতে হবে।’
কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনোইট প্রেফোনটাইনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নিজেদের অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে কানাডা সরকার। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মানবিক সমস্যা সমাধানে অবদান রাখা, মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখা, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ও রোহিঙ্গাদের কণ্ঠ প্রসারের সুযোগ করে দেওয়া।
অন্যদিকে মিয়ানমারের প্রতি বাংলাদেশ সব সময় প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করে আসছে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কঠিন যে বাস্তবতা আমাদের মনে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। সেদিক থেকে বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতি সব সময় এক আদর্শ প্রতিবেশীর মতো আচরণ করে এসেছে। কিন্তু অনেক সময়ই মিয়ানমার সে জায়গা থেকে বিচ্যুত ছিল। রোহিঙ্গা সমস্যার শুরু থেকে বাংলাদেশে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করতে চেয়েছে। দু’বার আমরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সমর্থন করেছি, কিন্তু তারা তাদের দেশের মানুষদের ফেরত নিচ্ছে না।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভাসানচর নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সাগর থেকে ৩০৬ রোহিঙ্গাকে আমরা উদ্ধার করে ভাসানচরে রেখেছি। সেখানে তারা ভালো আছেন। অন্য রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। এর আগে সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখানোর জন্য জাতিসংঘ প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হবে।
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাহান সুলতানা। এতে সমাপনী বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম।