এ মুহূর্তে বাজার সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে পারেন। অর্থাৎ বাজার ভালোর করার জন্য কোনটা করা উচিত বা উচিত নয়। বাজার চলবে তার নিয়মানুযায়ী। কিন্তু আমাদের বাজার চলে কৃত্রিম উপায়ে। ইচ্ছা হলে বাড়বে আবার কমবে এটা বাজারের নিয়ম হতে পারে না। বাজারের প্রত্যেকটা বিষয় আপন গতিতে চলবে। শেয়ারের চাহিদা বেশি হলে দর বাড়বে এবং শেয়ারের মান খারাপ হলে ওই শেয়ারদর কমবেই। কিন্তু যেখানে কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়ানো বা কমানো হয়, সেখানে বাজার ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজারের টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ রহমত উল্লা এবং আইসিএবির কাউন্সিল সদস্য মো. শাহাদাৎ হোসেন, এফসিএ।
মোহাম্মদ রহমত উল্লা বলেন, টেকনিক্যাল এনালিস্টে বোঝা যাচ্ছে সূচক পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ হাজার ২০০ পয়েন্ট এ স্থানে বাজার ভালো করার সুযোগ রয়েছে। তাই বাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি সূচক পাঁচ হাজারের নিচে চলে যায় সেক্ষেত্রে বাজার খারাপ অবস্থায় চলে যাবে। ২০১৩ সালের মার্চের পর থেকে খাতভিত্তিক বিশেষ করে ব্যাংক খাত বাজারকে ভালো করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এবার তা দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংক খাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর নিম্নগতিতে রয়েছে। এ খাত ভালো করার সময় এখনই। এ খাতকে ভালো করতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বাজারসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ডিসেম্বরের পর বাজারকে গতিশীল অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন বাজারে সূচক, দৈনিক লেনদেন এবং প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারদর কমে যাচ্ছে। আসলে ২০১০ সালের ধসের পর বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি তেমন আস্থা নেই। সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ের কারণে বাজার এ রকম অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আইপিওর ব্যাপারে কিছু চাপ রয়েছে, ব্যাংকের সুদহার কমানো বা বাড়ানো এবং সঞ্চয়পত্রের সুদহার প্রভৃতি বিষয়গুলো বাজার ভালো করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। এখন কথা হচ্ছে বাজার এ রকম অবস্থায় যাচ্ছে কেন, এর জন্য একটা বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। এ বাজারে একদিন ২৭৫ কোটি টাকা টার্নওভার আবার একদিন ১২০০ কোটি টাকা টার্নওভার হয়েছে। ২৭৫ কোটি টাকা আর ১২০০ কোটি টাকার মধ্যে অনেক ব্যবধান। কী কারণে বাজারে এ ব্যবধান হচ্ছে তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রকৃত কারণ বের করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি হবে এবং বাজারে আসতে উৎসাহী হবে বিনিয়োগকারীরা।
তিনি আরও বলেন, আইপিও হচ্ছে বাজার সচল রাখার মূল উৎস। এ মুহূর্তে আইপিও সাময়িক বন্ধ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আসলে কোনো একটা সমস্যা হলে ওই বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। প্রবাদে আছে, মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা। এটা সমস্যা সমাধানের মূল পথ নয়। বরং তাকে ভালো করে চিকিৎসা করাতে হবে। এ মুহূর্তে বাজার সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে পারেন। অর্থাৎ বাজার ভালোর জন্য কোনটা করা উচিত বা কোনটা উচিত নয়। বাজার চলবে তার নিয়মানুযায়ী। কিন্তু আমদের বাজার চলে কৃত্রিম উপায়ে। ইচ্ছা হলে বাড়াবে আবার কমাবে। এটা বাজারের নিয়ম হতে পারে না। বাজারের প্রত্যেকটা বিষয় আপন গতিতে চলবে। শেয়ারদর আপন গতিতে বৃদ্ধি পাবে, শেয়ারের চাহিদা বেশি হলে দর বাড়বে এবং শেয়ারের মান খারাপ হলে ওই শেয়ারদর কমবেই। কিন্তু যেখানে কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়ানো বা কমানো হয়, সেখানে বাজার ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ