কৃষকের অ্যাপ

কৃষকের জন্য সুসংবাদ বৈকি। প্রযুক্তির কল্যাণ এখন কৃষকের কল্যাণে যুক্ত হয়ে কৃষিজীবী মানুষের জীবনে নতুন দিগন্তের উম্মোচন ঘটাতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন কৃষি ও কৃষকবান্ধব সরকার এ দুরবস্থা লাঘবে দীর্ঘদিন ধরে সচেষ্ট। তারই অংশ হিসেবে বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঠিক দিকনির্দেশনায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খাদ্য অধিদপ্তর মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য ঠেকাতে আমন-২০১৯ মৌসুমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিল।

কৃষকের অ্যাপটি মূলত স্মার্টফোনে ব্যবহার উপযোগী একটি অ্যাপ বা সফটওয়্যার। এটি ডিজিটাল ধান বা খাদ্যশস্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেটি শুধু কৃষকই ব্যবহার করবেন। কৃষক যেন আঙুলের ছোঁয়ায় সরকারি সেবা পেতে পারেন, সে লক্ষ্যেই এ অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করে কৃষক ঘরে বসেই সরকারের কাছে ধান বিক্রির আবেদন করতে পারবেন। কৃষক আবেদন করার পর আবেদনটি কি অবস্থায় আছে, তিনি তা এ অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারবেন। কৃষক যদি কৃষক নির্বাচনী লটারিতে বিজয়ী হন এবং বরাদ্দ আদেশ পান, সেটিও তিনি ঘরে বসেই জানতে পারবেন। কৃষক যখন ধান সরবরাহ করবেন তখন তিনি অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারবেন তার WQSC (Weight Quality Stock Certificate) বা ওজন মান মজুত সনদ-এর অবস্থা কী? এছাড়াও তিনি মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে তার আবেদনের অবস্থা জানতে পারবেন। এর জন্য উপজেলা খাদ্য অফিসে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এটি গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়।

এরই মধ্যে পাইলটিং ও অন্তর্ভুক্ত ১৬ উপজেলার এক লাখ ৪১ হাজারের বেশি কৃষক এ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন আবেদন করেছেন। এখনও পর্যন্ত এ অ্যাপটি ২৬ হাজারেরও বেশি পরিমাণ ডাউনলোড হয়েছে। কৃষক নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ও ধান বিক্রির আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২০ ডিসেম্বর। এরপর ২৫ ডিসেম্বরের কম্পিউটারভিত্তিক লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কারিগরি সহযোগিতায় অ্যাপটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

এটির নিবন্ধন প্রক্রিয়া খুবই সহজ। তবে নিবন্ধন শুধু একবারই করা যায়। নিবন্ধনের সময় সংশ্লিষ্ট কৃষকের জাতীয় পরিচয়পত্রটি নির্বাচন কমিশন থেকে যাচাই (অনলাইনে) করা হয়ে থাকে। প্রথমে কৃষক একটি নিবন্ধন আবেদন করেন। এরপর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিবন্ধন আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন করলে সংশ্লিষ্ট কৃষক ধান বিক্রির জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার পর কৃষক নির্বাচনী লটারি অনুষ্ঠিত হয়। সে লটারিতে কৃষক নির্বাচিত হলে তিনি ধান জমা দেওয়ার জন্য বরাদ্দ আদেশ পাবেন। বরাদ্দ আদেশে উল্লেখ থাকে কি পরিমাণ ধান কোন এলএসডিতে সরবরাহ করতে হবে। ধান সরবরাহ করা হলে সংশ্লিষ্ট কৃষকের ডছঝঈ-এর প্রক্রিয়া শুরু হয়। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক WQSC  মঞ্জুর করলে কৃষক ব্যাংক থেকে তার প্রাপ্যতা বুঝে  নেবেন।

এটি ব্যবহারের ফলে সরকারি সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে TCV (Time-Cost-Visit)  সূচক বৃদ্ধি পাবে। আগে যেমন কৃষককে ধান বিক্রি-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য উপজেলা অফিসে যেতে হতো, বর্তমানে কৃষক ঘরে বসেই সেসব তথ্য পেয়ে যাবেন। যেহেতু কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে কৃষক সব তথ্য জানতে পারছেন, সেহেতু হয়রানি অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়াও এটি ব্যবহার করে কৃষক তার মতামত বা অভিযোগ করতে পারবেন। ডছঝঈ প্রস্তুত হওয়া মাত্র কৃষক ব্যাংক থেকে খুব সহজেই তার প্রাপ্যতা বুঝে নিতে পারবেন। যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন থেকে যাচাই করা হয়ে থাকে, তাই ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রধারী কেউ নিবন্ধিত হতে পারবেন না।

এবারের আমন মৌসুমে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১৬ জেলার ১৬ উপজেলায় কৃষক অ্যাপ চালু হয়েছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে কৃষক ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে ধান বিক্রির যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। গত ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ পর্যন্ত এ অ্যপের মাধ্যমে ১৬ জেলায় মোট এক লাখ ৪১ হাজার ৯৮৯ কৃষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ধান বিক্রির আবেদন করেছেন ৭৬ হাজার ৫৮৩ জন । পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ কৃষক অ্যাপ চালু করা হবে।

  মেহেদী সুমন

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০