Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 11:03 am

কৃষকের গোলা খালি হওয়ার পর বাড়ে ধান-গমের দাম

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: উত্তরের শীতপ্রবণ জেলাগুলোর অন্যতম ঠাকুরগাঁও। গমের ভালো আবাদের জন্য এ জেলার খ্যাতি রয়েছে। কৃষিকাজ ছাড়া জেলার মানুষের ভাগ্য বদলানোর মতো এখনও গড়ে উঠেনি ভারী কোনো শিল্পকারখানা বা প্রতিষ্ঠানও। তাই কৃষিকাজই এ জেলার মানুষের একমাত্র ভরসার। তবে তাতেও অনেক ক্ষেত্রেই ভাগ্য ফেরে না তাদের। তবে এবার বাজারে ধানের ভালো দাম থাকায় বেশ লাভবান হয়েছেন কৃষক। এবার গমের আবাদের মুনাফার আশা করছেন তারা।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে মৌসুসের শুরুতে ধান ও গমের দাম কমে যায়। আর কৃষকের গোলা থেকে ফুরিয়ে যেতেই বাড়ে ধান ও গমের দাম। এভাবে বাজারে দাম উঠানামার ফলে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষিপণ্যের নায্য দাম। ঠাকুরগাঁও জেলা অতি শীতপ্রবণ। এ জেলায় গরমের সময় অত্যধিক গরম এবং শীতকালে অত্যধিক ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। আর বেশি শীত পড়ায় এ অঞ্চলে গমের আবাদও ভালো হয়। সে কারণে এবার আগে থেকে শীত পড়তে শুরু করায় ঠাকুরগাঁওয়ে এবার গমের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার মোট গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হয়েছে ৫০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে, এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৩২ হাজার ৪৫০ হেক্টর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় গম আবাদ হয়েছে এক হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর, রানীসংকৈল উপজেলায় সাত হাজার ৫০০ হেক্টর, পীরগঞ্জে ৯ হাজার হেক্টর, হরিপুরে পাঁচ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলার নানা জাতের বিশেষ করে বারি গম- ২৫, ২৮, ৩০, ও ৩৩ জাতের গম আবাদ করেছেন কৃষকরা। তাছাড়া গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনেক জমিতে গম আবাদ হয়েছে। ধানের দাম ভালো হওয়ার পর গমের দামও ভালো হবে আশা করে এ বছর কৃষকরা এ ফসল চাষে বেশি আগ্রহী। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এবং কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা পেলে ভালো ফলন হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. আলম আলী বলেন, ‘এবার তিন একর জমিতে গম আবাদ করে ফলনও ভালো আশা করছি। কিন্তু খরচ বেড়েছে। আশা করি, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ও গমের দাম ভালো থাকলে লাভবান হতে পারব।’

সদর উপজেলার আখানগর গ্রামের কৃষক মো. বদিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ছয় একর জমিতে গম আবাদ করছি। গমের দাম কেমন হবে জানি না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই আছে। আমরা কৃষিকাজ ছাড়া অন্যকিছু করতেও পারি না, আমাদের কেউ দেখেও না।’ এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপন্ন করি, সবসময় সেই কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পাই না। সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত থাকতে হয়।’

কৃষকরা জানিয়েছেন, গম আবাদে একবার নিড়ানি ও সেচ দিলেই চলে। এতে খরচ কম হলেও ফলন কম। ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া যদিও গম চাষের অনুকূলে তবুও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কারণে ফলন কম হওয়ায় ফসলটির আবাদ তেমন বাড়ছে না। ভুট্টা ও মরিচের চাষ বাড়ছে। গমের তুলনায় ভুট্টা ও মরিচের দাম ও ফলন বেশি হওয়ায় এ ফসল দুটি চাষে আগ্রহ রয়েছে কৃষকের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গম ও ভুট্টা থেকে আটা, ময়দা, বিস্কুট, পাউরুটি এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি হয়। দেশীয়ভাবে বিপুল পরিমাণ চাষ হলেও বিদেশ থেকে গম আমদানি করায় কৃষকরা দাম কম পান। ফলে এ তারা এ ফসলটি  চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অন্যদিকে  ভুট্টা, ও মরিচে আগ্রহী হচ্ছেন। এছাড়া হেক্টরপ্রতি ৮০-১০০ মণ গম উৎপন্ন হলেও ভুট্টা উৎপন্ন  হয় ৩০০-৩৫০ মণ। আর বিঘাপ্রতি মরিচ চাষে খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে বিক্রি করা যায় ৫০-৬০ হাজার টাকার মরিচ। ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফতাব হোসেন বলেন, ‘এ জেলায় বেশি পরিমাণ জমিতে কৃষকরা গম আবাদ করেন। গমের বীজ বপন, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, সেচ প্রদান পদ্ধতি সম্পর্কে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি গম চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবে।’