কৃষকের পাশে কৃষক ভুটানে শস্য অপচয় শূন্যের কোঠায়

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রতি মৌসুমে ভুটানের কৃষকরা উৎপাদিত কৃষিপণ্য ক্ষেতে পচে যাওয়ার কারণে বিলাপ করেন। একই সময় শহরের বাসিন্দারা স্থানীয় পর্যায়ে উৎপন্ন কৃষিপণ্য সাশ্রয়ী দামে কেনার চেষ্টা করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকারি এজেন্সিগুলো নানা ধরনের ভর্তুকি ও সহায়তার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েছেন। যদিও ভুটানের কৃষকরা সেসব পণ্য বাজারজাতকরণে বিশেষ চ্যালেঞ্জে পড়েন। এ কারণে মাঠেই নষ্ট হয় অনেক শস্য। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সিরাং শহরের কৃষকরা উদ্যোগী হয়ে একটি বাজার ব্যবস্থা চালু করেছেন, যাতে উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার কাছে সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়া যায়। খবর: কুয়েনসেল।

ভুটানের গণমাধ্যম কুয়েনসেল জানায়, মধ্য ভুটানের সিরাং শহরটি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিখ্যাত। এখানকার পাহাড়ি ঢাল ও জলবায়ু শস্য উৎপাদনের পক্ষে সহায়ক। এর প্রশাসনিক সদর দপ্তর ঢাম্পুতে। ঢাম্পু হাসপাতাল ও জংয়ের সংযোগস্থলে কৃষকদের বাজার রয়েছে, যেখান থেকে সহজে বাসিন্দা ও কৃষকরা তাদের পণ্য কেনাবেচা করতে পারেন।

কৃষকরা এ বাজারের নাম দিয়েছেন সিরাং ন্যাচারাল। এর সদস্যসংখ্যা ১৭। তাদের বেশিরভাগ এসেছেন প্রত্যন্ত ডুংলাগং থেকে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত সব ধরনের কৃষি ও ডেইরি পণ্য তারা বাজারে নিয়ে আসেন। অ্যাভোকাডো, মরিচ ও মরিচের গুঁড়া, আচার, প্যাকেটজাত বীজ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, শস্য, কম্পোস্ট সার, পুনর্ব্যবহƒত পণ্য ও অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায় বাজারে। এসব পণ্যের বেশিরভাগ উৎপন্ন হয় ডুংলাগংয়ের ড্রংসেপ ইয়ারগি ডেটসেনে। এখান থেকে পর্যায়ক্রমে কৃষকরা তাদের পণ্য নিয়ে আউটলেটে আসেন। শুরুর দিকে এখানে দিনে ৬০০ ক্রেতা আসতেন। অল্প সময়ের মধ্যে সেই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

বাজারে কৃষকদের পরিচালিত একটি ক্যাফেও রয়েছে। এর নিচতলায় শস্য সংরক্ষণাগার সুবিধা রয়েছে। পণ্যের মান বজায় রাখার জন্য কয়েকজন কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন কৃষকরা। স্বল্পমূল্যে এ সংরক্ষণাগারের সুবিধা পান কৃষকরা। আউটলেটে সাধারণত দুই দিন কোনো পণ্যের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৪ দশমিক ১ গুলট্রাম (ভুটানের মুদ্রা) দিয়ে নির্মিত আউটলেটটি চালু করা হয়। সেই থেকে আর ক্ষেতে ফসল নষ্ট হচ্ছে না বলে জানান উদ্যোক্তারা। কোনো শস্যপণ্য ও ফল নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় না কৃষকদের।

বাজারের ম্যানেজার ডিও কুমার রাই বলেন, কৃষকরা ডুংলাগংয়ের ১০ একর জমি বর্গা নিয়ে শস্য উৎপন্ন করেন। তবে আমরা গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে একে অন্যের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে চাই, তা যত ছোট দল হোক না কেন। এতে তাদের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকবে না। আমরা ‘শূন্য অপচয়’ নীতি মেনে চলছি। তার স্ত্রী জ্যোতি রাইও একটি কফি শপের মালিক। তিনিও কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে পণ্য বিপণনে কাজ করছেন।

গোপি শেরপা নামে এক কেঁচো সার প্রস্তুতকারী কৃষক জানান, এখন চাইলেই আউটলেটে তাদের পণ্য প্রদর্শন করা যায়। এতে তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসার বাড়ছে। থাকরলিং অঞ্চল থেকে আসা এ কৃষক বলেন, অতীতে আমরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে সার বিক্রি করতাম। এ বাজারের মাধ্যমে আমরা বেশি ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারছি।

দেশের অন্যান্য জেলায়ও এ ধরনের বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে বলে জানান ডিও কুমার। আগামী ছয় মাসের মধ্যে অন্য শহরগুলোয় পণ্য বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। শিগগির রাজধানী থিম্পুতে নতুন সেলস আউটলেট খুলতে পারব এবং অনেক যুবককে নিয়োগ দিতে পারব। বাজার সম্প্রসারণ ঘিরে আরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, কৃষকরা যেন তাদের সুবিধা পান, ভাগের অংশ বুঝে পান ও মূল্যস্ফীতির সমস্যায় না পড়েন, সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে মূল্যস্ফীতি ও ঘনঘন দাম পরিবর্তন নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০