মেহেদী হাসান: খেলাপি হয়ে পড়ছে কৃষি খাতের ঋণও। এ খাতের ঋণের খেলাপির পরিমাণ বর্তমানে পাঁচ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের প্রায় সবই রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোর, যা পাঁচ হাজার ১০ কোটি টাকা। এছাড়া বাকি ১৯৭ কোটি টাকা বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি খাতে খেলাপি ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের, যার পরিমাণ দুই হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এর পরেই সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। কৃষি খাতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৮৪ কোটি টাকা।
কৃষিঋণে খেলাপির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল শেয়ার বিজকে জানান, কৃষকদের নানা ধরনের সমস্যার কারণে অনেকে কৃষিঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। তবে আমাদের খেলাপি ঋণ আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কৃষিঋণে আমরা অনেক ভালো করছি। কৃষিঋণের মধ্যে শস্য খাতে ঋণ বিতরণে সব সময় প্রথম হই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি (২০১৭-১৮) অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আট মাসে প্রায় ১৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ছয় হাজার ২১৯ কোটি টাকা। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে প্রায় আট হাজার ৩০১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক নীতিমালায় কৃষিঋণ বিতরণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বছর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ২০ কোটি এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ৭২০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জোর তৎপরতা এবং ব্যাংকগুলোর উদ্যোগের কারণে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে। তবে কৃষিঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মোটেই ইতিবাচক নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেছিলেন, কৃষিঋণ খেলাপিতে প্রকৃত কৃষকদের দোষ নেই। তারা অনিয়ম-দুর্নীতি করে না, বরং কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী যোগসাজশ করে কৃষকদের ফাঁসায়।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কৃষিঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে সরকারি খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের আট মাসে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি তিন হাজার ২৮৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। অর্থবছরের আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৬৭ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করেছে কৃষি ব্যাংক। পুরো অর্থবছরের জন্য কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে এ ব্যাংকটি এক হাজার ৫১ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬৩ শতাংশ। পুরো অর্থবছরের জন্য এ ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো।

Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 5:23 am
কৃষিঋণে খেলাপি পাঁচ হাজার ২০৭ কোটি টাকা
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: