নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কথা মাথায় রেখে কৃষকদের মধ্যে বেশি বেশি ঋণ বিতরণের তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে এক সভায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শিল্পঋণের চেয়ে কৃষিঋণ বিতরণে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দেন গভর্নর। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট তৈরি হতে পারে। সেই সংকট কাটাতে ফসল উৎপাদনের বিকল্প নেই। খাদ্যের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে কৃষকদের মধ্যে বেশি বেশি ঋণ বিতরণের জন্য এ তাগিদ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংক আইএমএফসহ সবাই কৃষিঋণের ওপর আরও গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ প্রান্তিক পর্যায়ের ঋণে ক্ষতির পরিমাণও অনেক কম।
এদিকে ৩১ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে চলতি অর্থবছরের কৃষি ও পল্লিঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। কৃষিতে ৪ ও ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদে ঋণ দেয়া হয়। সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদের কৃষিঋণ বিতরণের সিদ্ধান্তটি নেয়া হয় শুধু কৃষি উৎপাদনে সম্পৃক্ত কৃষকদের জন্য। তবে এখন সেই ঋণ করপোরেট কোম্পানিতেও যাচ্ছে, যারা কৃষিঋণ নিয়ে ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ করছেন। এতে কৃষি খাতে অসম প্রতিযোগিতা ফুটে উঠেছে। বড় কোম্পানিগুলোর বড় অঙ্কের বিনিয়োগ চাপের বিপরীতে প্রান্তিক কৃষক কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ ও বিপণনে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
ফসল ও সবজি চাষে চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি এবং বেসরকারি ব্যাংক ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা বিতরণ করবে।
গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয় ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার চেয়ে বেশি। গত অর্থবছরের বিতরণকৃত ঋণের ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন কৃষি ও পল্লিঋণের সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৯৭ হাজার নারী নিয়েছেন ১০ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। আর চর, হাওরসহ অনগ্রসর এলাকায় কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে ১৯ কোটি টাকা।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কৃষি নীতিমালায় কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাঁস পরিপালনের জন্য ঋণনীতি; চিয়া বীজ, ত্বীন ফল, সুগার বিট চাষে ঋণ নীতি; ভিয়েতনামি হাইব্রিড নারিকেল, কফি ও সুইট কর্ন চাষের ঋণ নীতি; সামুদ্রিক শৈবাল চাষ ও মৎস্য খাতে গলদা চিংড়ি, দলবদ্ধভাবে ঋণ গ্রহণ ও একর প্রতি ফসল উৎপাদনে কৃষিঋণ নীতি করা হয়েছে।
কৃষিঋণ পেতে ভোগান্তি এড়াতে কৃষকদের জন্য ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবে ঋণ চলে যাচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারপরও কোনো অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।