Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 6:56 pm

কৃষিক্ষেত্রে বাড়ুক প্রাকৃতিক পদ্ধতির ব্যবহার

 

ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা নিধনে আলোক ফাঁদের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার মিরপুরে। স্থানীয় কৃষি অফিসের দেখানো পদ্ধতিতে উদ্বুদ্ধ কৃষকের মধ্যে নিত্যদিনই বেড়ে উঠছে এটির ব্যবহার। তাদের এ প্রবণতা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এতে উৎপাদন ব্যয়ই শুধু কমবে না, পোকা দমনে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসল বা সবজি খেয়ে মানব স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয় তা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। আমরা মনে করি, ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা দমনে সেখানকার কোনো কৃষক যাতে এ পদ্ধতির বাইরে না থাকেন, সেটি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে স্থানীয় কৃষি অফিসকে। কৃষকরা যেহেতু উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেরাই এর ব্যবহার শুরু করেছেন, আশা করা যায় সামান্য তদারকি থাকলেই এতে সফল হওয়া যাবে।

উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে কৃষককে উৎসাহ জোগানো হতো এক সময়। স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে এ ধরনের শস্য, সবজি ও ফল খাওয়া থেকে এখন মানুষ নিরুৎসাহিত হচ্ছে ক্রমে। এ অবস্থায় ‘আলোক ফাঁদ’ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত শস্যের বাড়তি চাহিদাও যে বাজারে থাকবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এ ধরনের কোনো কোনো খাদ্যপণ্য অপেক্ষাকৃত বেশি দামেও বিক্রি হয় বাজারে। আমরা চাইবো, আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব বিষয়ও নজরে আনবেন কৃষকের। এতে বিভিন্ন কারণে ফসলের উৎসাহব্যঞ্জক দাম না পাওয়া কৃষক হবেন অনুপ্রাণিত। বস্তুত আলোক ফাঁদ তৈরির জন্য যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন, বাজারে সেগুলো সহজলভ্য। কারিগরি দিকও খুব বেশি জটিল নয়। বাড়তি ফলনের আশায় কীটনাশক ব্যবহারে যারা এরই মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন, তাদের কেউ কেউ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফিরতে নাও চাইতে পারেন। কীটনাশক ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব কোনো কোনো ক্ষেত্রে আশেপাশের জমিতেও যে পড়ে সেটাও বোঝাতে হবে আলোক ফাঁদ ব্যবহারে অনিচ্ছুকদের।

মনে রাখা দরকার, ক্ষেতে যেসব পোকা-মাকড় থাকে, তার সবগুলোই ফল বা ফসলের জন্য ক্ষতিকর নয়; কোনো কোনোটি উপকারীও বটে। কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষতিকর-উপকারী নির্বিশেষে নিধন হয় সব ধরনের পোকা। কখনও কখনও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে স্থানীয় পর্যায়ের বাস্তুসংস্থানে। পোকা নিধনে আলোক ফাঁদের মতো প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহারের সুবিধা হলো, সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে এতে ফসলের জন্য উপকারী পোকাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এও মনে রাখতে হবে, বাস্তুসংস্থানের যে চক্র রয়েছে, তার কোথাও বিশৃঙ্খলা বা বিপর্যয় ঘটলে এর প্রভাব পড়ে স্থানীয় পরিবেশে। এতে বেড়ে ওঠে নতুন রোগ-ব্যাধির আক্রমণসহ জনজীবনে নানা ভোগান্তি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমনে কীটনাশকের ব্যবহার কমানোই এখন কাম্য। এজন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষককেও এ পদ্ধতির উপকারিতাগুলো জানানো দরকার। সব এলাকার কৃষি অফিস এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে কাজটি সহজ হবে। ফসল উৎপাদনে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাঠামোগত কোনো ব্যবস্থা দাঁড় করানো যায় কি না, সেটাও ভাবতে হবে নীতিনির্ধারকদের।