Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:42 pm

কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিনজন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণার জন্য এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে তিন বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। গতকাল রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলবিজয়ী হিসেবে তিনজনের নাম ঘোষণা করে। তারা হলেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রজার পেনরোজ, জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল ফিজিকস ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেইনহার্ড গেনজেল এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দ্রে গেজ।

এ-সম্পর্কিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ‘কৃষ্ণগহ্বর আপেক্ষিকতা তত্ত্বের একটি শক্তিশালী অনুমান’ শীর্ষক আবিষ্কারের জন্য রজার পেনরোজকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি নোবেল পুরস্কারের অর্ধেক পাবেন। পুরস্কারে মোট মূল্যমান এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১১ লাখ ২৩ হাজার ডলার)। পুরস্কারের বাকি অর্ধেক পাবেন রেইনহার্ড গেনজেল ও আন্দ্রে গেজ। আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে বড় ধরনের একটি কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব আবিষ্কারের কারণে তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

মহাবিশ্বের সবচেয়ে চমকপ্রদ ধারণা কৃষ্ণগহ্বর-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য এক ব্রিটিশ ও দুই মার্কিন বিজ্ঞানীকে এ বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো। তিনজনই এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। রজার পেনরোজ তার গবেষণার মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন, সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বই কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেয়। আর রেইনহার্ড গেনজেল ও আন্দ্রে গেজ আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে এমন এক অদৃশ্য ও ভীষণ ভারী বস্তুর অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন, যা এর আওতাধীন তারকারাজির গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ অদৃশ্য কিন্তু ভীষণ ভারী বস্তুটি আদতে শক্তিশালী কোনো কৃষ্ণগহ্বর বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

কিংবদন্তি বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বহু বছর আগে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দিয়ে গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কৃষ্ণগহ্বর এ তত্ত্বের সরাসরি ধারাবাহিকতার একটি অংশ এমন বিষয়টিই গাণিতিক যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন রজার পেনরোজ। আইনস্টাইন যদিও এ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দেন, তারপরও তিনি কখনও কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন না। মজার বিষয় হলো, এখন তার তত্ত্বের মধ্যেই এ কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বের ইঙ্গিত রয়েছে বলে প্রমাণ হাজির করে নোবেল পেলেন রজার পেনরোজ।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার রজার পেনরোজ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ইমেরিটাস রোজ বল অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৩১ সালে জন্ম নেওয়া এ বিজ্ঞানী একই সঙ্গে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াহেম কলেজের ইমেরিটাস ফেলো ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজের সম্মানিত ফেলো। ১৯৭৫ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য তিনি এরই মধ্যে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

কৃষ্ণগহ্বর হচ্ছে এমন এক অতিদানবীয় ভরবিশিষ্ট বস্তু, যার আকার ভরের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ঘনত্ব থাকে অতি উচ্চ। ফলে এটি সবকিছুকেই নিজের কেন্দ্রের দিকে টেনে নেয়। এমনকি আলোও এর আকর্ষণকে অগ্রাহ্য করতে পারে না বলে এ ধরনের বস্তু থেকে কোনো আলো বের হয় না। ফলে এটি দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকে। তীব্র আকর্ষণই এর অস্তিত্বের প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে হাজির হয়।

বিশেষ অবদানের জন্য ছয়টি ক্যাটেগরিতে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর চিকিৎসাবিজ্ঞান ক্যাটেগরি দিয়ে জয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু করা হয়। গত ৫ অক্টোবর চিকিৎসায় পুরস্কার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল দেওয়া হয়েছে পদার্থবিজ্ঞানে, ৭ অক্টোবর রসায়নে, ৮ অক্টোবর সাহিত্যে, ৯ অক্টোবর শান্তিতে এবং ১২ অক্টোবর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এবার নোবেল পুরস্কারজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হলো। তবে এখানেও করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য বছর যেমন ডিসেম্বরে জাঁকালো আয়োজনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়, এবার তেমনটা হচ্ছে না। আগামী বছরের মধ্যেই করোনা মহামারি শেষ হবে বলে আশা করছে নোবেল কমিটি। আর তাই ২০২১ সালের নোবেলবিজয়ীদের সঙ্গে চলতি বছরের বিজয়ীদের পুরস্কারপ্রাপ্তি উদ্?যাপনের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

১৯০১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে ১১০টি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে আছেন ১২ নারী। চিকিৎসাবিজ্ঞানে পুরস্কারজয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সি ফ্রেডেরিক জি ব্যানটিং। ১৯২৩ সালে পুরস্কার জয়ের সময় তার বয়স ছিল ৩২ বছর। আর ১৯৬৬ সালে ৮৭ বছরে পুরস্কারটি পান পেটন রউস। তিনি সবচেয়ে বেশি বয়সে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পান।