কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি নবায়ন করেনি রাশিয়া

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত বছর ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যে শস্য চুক্তি হয়েছিল, তা থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। সোমবার রাজধানী মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র ও প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ এই ঘোষণা দিয়েছেন। খবর: আল-জাজিরা, রয়টার্স

সোমবার সকালে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে পেসকভ বলেন, শস্যচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার শর্ত পূরণ করা হলে মুহূর্তেই চুক্তিতে ফিরবে রাশিয়া। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

শস্যচুক্তি বাতিলের বিষয়টি তুরস্ক, ইউক্রেন ও জাতিসংঘকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।

চলতি মাসের শুরু থেকেই অবশ্য রাশিয়া একাধিকবার শস্যচুক্তি থেকে সরে আসার বার্তা দিয়ে আসছিল, তবে এই চুক্তির অপর দুই অংশীদার তুরস্ক ও জাতিসংঘ এই চুক্তির মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। চুক্তি নবায়নের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে চিঠিও লিখেছিলেন।

সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১২টায় কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির চুক্তির শেষ দিন; আর এই দিনই এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল রাশিয়া।
২০২২ সালে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কৃষ্ণসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গম রপ্তানিকারী দেশ ইউক্রেনের শস্যগুদামগুলোতে আটকা পড়ে লাখ লাখ টন গম, ভুট্টা, ও সূর্যমুখীর বীজ।

এতে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারগুলোতে গম ও ভোজ্যতেলের যোগান সংকট শুরু হয়, ফলে বিশ্বজুড়ে হু হু করে বাড়তে থাকে খাদ্যশস্য আর ভোজ্যতেলের দাম। এ অবস্থায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়।

শস্যচুক্তির আরেকটা বড় কারণ ছিল, যেসব গরিব দেশে খাদ্যের দাম বিপুল বেড়েছে, ইউক্রেনের শস্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব দেশে পাঠানো হবে।

কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া অভিযোগ করে, চুক্তি ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হয়নি। রাশিয়ার শস্য ও সার রপ্তানির বাধা অপসারণ করা হয়নি। গরিব দেশের পরিবর্তে ইউক্রেনের শস্য যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন ধনী দেশে। এ অবস্থায় শস্যচুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।

জাতিসংঘের দাবি, ইউক্রেনের শস্য অগ্রধিকার ভিত্তিতে গরিব দেশেই পাঠানো হচ্ছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে চুক্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৩০ লাখ মেট্রিক টন শস্য রপ্তানি করেছে ইউক্রেন।

বিশ্বের তিন মহাদেশের ৪৫টি দেশে এসব শস্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ গেছে এশিয়ায়, ১২ শতাংশ গেছে আফ্রিকায়, ১ শতাংশ পূর্ব ইউরোপে আর ৪০ শতাংশ গেছে পশ্চিম ইউরোপে।

চুক্তিতে ইউক্রেনের শর্ত ছিল কৃষ্ণ সাগরের জাহাজ চলাচলের পথ থেকে সব মাইন অপসারণ করতে হবে এবং শস্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিতে হবে।

অন্যদিকে রাশিয়ার শর্ত ছিল, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার শস্য ও কৃষিপণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোীয় মিত্ররা যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেসব তুলে নিতে হবে। কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের পর দেখা যায়, শর্ত অনুযায়ী রাশিয়া শস্যবাহী জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিলেও রাশিয়ার শস্য ও কৃষিপণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি পশ্চিমা বিশ্ব।

এই ব্যাপারটিতে যে রাশিয়া খুবই ক্ষুব্ধ তা গত কয়েক মাস ধরেই জানান দিচ্ছে মস্কো। গত ১৮ জুন রুশ দৈনিক ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেসকভ বলেছিলেন, ‘এই চুক্তির পেছনে আমাদের কিছু শর্ত ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য সেসবের কোনোটিই মানা হয়নি। ভবিষ্যতে কী হবে তা এখন বলা খুবই কঠিন; তবে আমরা বলতে পারি মস্কো আর এই চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী নয়। আমরা অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি, অনেক ছাড় দিয়েছি কিন্তু আর নয়।’

গত বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছিলেন যে খাদ্য ও সার রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হলে মস্কো এই ‘চুক্তি থেকে নিজেকে স্থগিত’ করবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০