নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনীতিতে বিএনপির যে লক্ষ্য সেটি বাইরের কেউ করে দিয়ে যাবে না বলে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, নিজেদের কাজ নিজেদেরই করতে হবে। আর এ জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসে গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুদেশের সম্পর্কে ‘উত্তেজনা’ মিটিয়ে ‘আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ কথা বলে যাওয়ার পর দিন বিএনপি নেতা এ কথা বলেন।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে লং মার্চ দিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় বক্তব্য দেন তিনি। গঙ্গা নদীর ওপর ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ১৯৭৬ সালের এই দিনে মওলানা ভাসানী রাজশাহী থেকে লং মার্চ করেছিলেন।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমাদের স্বার্থে আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের কেউ করে দিয়ে যাবে না, আমাদের নিজেদের সেটা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষকে তার অধিকার আদায়ের জন্য নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’
মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হারিয়ে ফেলেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি; আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো সংগ্রাম করছি গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। এজন্য আমাদের অনেকে প্রাণ দিয়েছেন, আমাদের অনেককে নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে।’
আন্দোলন ও ঐক্যে বিকল্প পথ নেই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে যদি আমরা রক্ষা করতে চাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যদি আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই, বাংলাদেশের জনগণকে যদি আমরা রক্ষা করতে চাই, তার যে উন্নয়ন আকাক্সক্ষা, তার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করার যে আকাক্সক্ষা, তা যদি আমরা রক্ষা করতে চাই, তাহলে দলমত নির্বিশেষে সব ভেদাভেদ ভুলে একত্র হয়ে এই ‘ভয়াবহ দানবীয় যে সরকার’, তাদের সরাতে হবে; যার একমাত্র কাজ হচ্ছে তাদের নিজেদের বৃত্ত তৈরি করা আর অন্য দেশের ‘যে প্রভুত্ব’, সেটা মেনে নিয়ে তাদের যে স্বার্থ, সেই স্বার্থ রক্ষা করা।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ফারাক্কা বাঁধ নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে তারা (ভারত) সব সময়ই গড়িমসি করেছে, এই সমস্যার সমাধান করেনি, করছে না। দীর্ঘকাল ধরে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ‘এই চুক্তি করছি, এই হয়ে যাবে, এখন ভালো অবস্থায় আছে’Ñএই করে করে সরকার সময় পার করেছে। এই যে ব্যর্থতা, এর মূল কারণ হচ্ছে যে, সরকার পুরোপুরিভাবে একটা ‘নতজানু’। তারা কখনই জনগণের স্বার্থে যে একটা স্ট্যান্ড নেয়া, সেই স্ট্যান্ড নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যর্থ হচ্ছে কারণ তারা (সরকার) তাদের (ভারত) কাছে অত্যন্ত দুর্বল।’
‘আজ হোক বা কাল হোক, এই সরকার বদলাবেই’ মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কেউ কেউ মনে করেন যে, শেখ হাসিনাকে পাঁচ বছর কেউ কিছু করতে পারবে না, আবার কেউ কেউ বলেন, যতদিন জীবিত আছেন তাকে নড়াতে পারবেন না। কিন্তু আমি দেখি সরকার এমনিই নড়ছে। কারণ, রিজার্ভ নাই। সরকার ভয়াবহ রকমের একটা অর্থনৈতিক সংকটে আছে।’
৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘জিতেছেন না হেরেছেন’, সেই বির্তক বাদ দিয়ে মান্না বলেন, ‘মানুষ এখন আমাদের পক্ষে আছে।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলির নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করে, জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে ‘অসম সম্পর্কের’ দায় শোধ করতে হচ্ছে। স্বদেশি হত্যা হচ্ছে, তার উপযুক্ত প্রতিবাদ পর্যন্ত হয় না। আমার এখানে লাশ ফেরত পাব কিনা এটার জন্য পতাকা বৈঠক হয় এটা খুব লজ্জার, দুঃখের এবং অপমানের।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সার্বভৌমত্বের দিক থেকে আমরা ‘দাসত্বের’ কবলে পড়েছি। আমাদের নতুন করে আন্দোলন করতে হবে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির তানিয়া রব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের বাবুল বিশ্বাস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুলও বক্তব্য দেন।
