নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাপড় শুল্ক-করাদি ফাঁকি দিয়ে খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগে শুল্ক গোয়েন্দা চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে পোশাক রফতানিকারক মেসার্স কেডিএস গার্মেন্টেসের একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করেছে। জব্দ করা পণ্যের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং এর ওপর প্রযোজ্য শুল্ক করাদির পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ টাকা। গতকাল সকালে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের দায়ে চট্টগ্রাম শুল্ক ভবনে মামলা করা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জানায়, আটক ট্রাকচালকের বক্তব্য অনুযায়ী পণ্যচালানটি চট্টগ্রামের কালুরঘাট কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জের ক্রেতা রতন মৃধার কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আর এ লক্ষ্যে বুধবার দুপুর ২টা থেকে ট্রাকটিতে পণ্য বোঝাই করা হয় এবং বিকাল সাড়ে ৫টায় কালুরঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ট্রাকটি যাত্রা করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বার কোয়ার্টার এলাকা অতিক্রমকালে শুল্ক গোয়েন্দার দল গাড়িটি থামিয়ে এতে পরিবহন করা পণ্য সম্পর্কে জানতে চান। এর উত্তরের গাড়িটির চালক মো. ইসহাক গোয়েন্দা দলকে বলেন, গাড়িতে ফেব্রিকস বহন করা হচ্ছে এবং গাড়িটি কেডিএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কালুরঘাট থেকে লোড করে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছে। তবে পণ্যটির আমদানি/বহনের সপক্ষে কোনো চালান বা আইনানুগ দলিলাদি গাড়িতে নেই মর্মে গাড়িটির চালক জানান। আর আটককারী দল পণ্যসহ কাভার্ড ভ্যানটি আটক করে চট্টগ্রামের কাস্টমস হাউজে নিয়ে যান। অভিযানকালে আটক ট্রাকটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ঝালকাঠি -ট- ১১-০২৮০ পাওয়া যায়। এতে ইনভেন্ট্রি করে তিন হাজার ৯০৩ কেজি উন্নত মানের ফেব্রিকস পাওয়া যায়। এ ইনভেন্ট্রি শেষে পণ্যচালানটি কাস্টম হাউজের শুল্ক গুদামে জমা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে শুল্ক ফাঁকির মামলা করা হয়।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাড়িতে রক্ষিত কাপড়ের রোলের প্রতিটিতে কউঝ মধৎসবহঃং ওহফঁংঃৎরবং খঃফ, ঈযরঃঃধমড়হম-ইধহমষধফবংয এবং গধফব রহ ঈযরহধ লেখা রয়েছে। আর এ প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রফতানিমুখী বন্ডেড প্রতিষ্ঠান। যার বন্ড লাইসেন্স নং-এস৪-৩৫/বন্ড/৮৩। পণ্য রফতানির উৎসাহিত করতে রফতানি পণ্যের কাঁচামাল শুল্কমুক্তভাবে আমদানির জন্য বন্ডিং সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কাঁচামাল দিয়ে পণ্য প্রস্তুতপূর্বক বিদেশে রফতানি না করে কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছিল।
এ প্রসঙ্গে জানতে কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানি করা কাপড়গুলো দিয়ে পোশাক প্রস্তুত করে বিদেশে রফতানির কথা থাকলেও এক্ষেত্রে পণ্যগুলো খোলা বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আর জব্দ পণ্যের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং এর ওপর প্রযোজ্য শুল্ক করাদির পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ টাকা। শুল্ক গোয়েন্দার যথাযথ উদ্যোগের ফলে এ অপচেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে একটি মামলা করা হয় এবং অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।