Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:23 pm

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ কমেছে, বেড়েছে দায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ কমেছে, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। যদিও এ সময় বৈদেশিক মুদ্রায় বেড়েছে দায়, যার পরিমাণ প্রায় ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক সম্পদ ছিল ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছর তা কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ ৯০ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৪ শতাংশ কমেছে। যদিও এ সময় দেশীয় মুদ্রায় সম্পদ বেড়েছে।

বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি কমেছে ব্যাংকিং খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদত্ত ঋণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদত্ত ঋণ ছিল ৭০ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সুবিধার (এলটিএফএফ) ঋণের পরিমাণ কমেছে। ইডিএফের আকার কমিয়ে আনা ও এলটিএফএফ সুবিধা বন্ধ করার ফলে এ খাতে প্রদত্ত ঋণ কমেছে। এ তহবিল দুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গঠন করা হয়েছে। যদিও ইডিএফ আকার কমিয়ে ও এলটিএফএফ সুবিধা বন্ধ করে রিজার্ভের উন্নতি করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করা হয়। এর ফলে রিজার্ভ কমে যায়। মূলত রিজার্ভ কমার কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি সম্পদের পরিমাণ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৪৫ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশে বিনিয়োগকৃত সম্পদ ছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের এ দুই খাতে সম্পদ কমলেও বাকি খাতগুলোতে তা বেড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টে সম্পদ বেড়েছে ১ হাজার ৪৩ কোটি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে থাকা সম্পদ বেড়েছে ৩ হাজার ৯১৮ কোটি, স্বর্ণ ও রূপায় সম্পদ বেড়েছে ৮৭৯ কোটি, স্বর্ণ বিক্রি থেকে সম্পদ বেড়েছে ৬১৩ কোটি এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক সম্পদ বেড়েছে ১২৪ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ যেমন কমেছে তেমনি বৈদেশিক সম্পদের দায়ও বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক দায় ছিল ৬১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছর এ দায় বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দায় বেড়েছে ৮ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক দায় বেড়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ)। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ সংস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় ছিল ৩৩ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৬ হাজার ৩০১ কোটি

টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৩২ কোটি টাকা। মূলত বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলারের ঋণ অনুমোদনের পর গত ফেব্রুয়ারিতে এর প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে সংস্থাটির কাছে দায় বেড়েছে। এছাড়া বিদায়ী অর্থবছর অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক দায় বেড়েছে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ দায়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। বিদায় অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।