কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিন

 

যে কোনো দেশের উন্নয়নে অবাধ তথ্য প্রবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্র যদি তার কার্যক্রম বিষয়ে নাগরিকদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করে, তাহলে সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনমনে কোনো সন্দেহ থাকে না। এতে মানুষ রাষ্ট্রের কল্যাণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে আগ্রহী হয়। কিন্তু সঠিক তথ্য সরবরাহ করা না হলে মানুষের মনে নানা সন্দেহের উদ্রেক ঘটে এবং সমাজে বিভিন্ন গুজব ডলাপালা মেলতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে সর্বত্র সঠিক তথ্য সরবরাহ করা আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘ব্যাংক খাতের তথ্য প্রকাশে অনীহা বাংলাদেশ ব্যাংকের!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ¥াসিক এবং বার্ষিক ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন আর্থিক সূচকের হালনাগাদ তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছে না। বিশেষ করে বর্তমান গভর্নর যোগ দেয়ার পর থেকে এমনটি করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগে ওয়েবসাইটে পণ্যভিত্তিক এলসি, শিল্প ঋণ, এসএমই ঋণ এবং ব্যাংকভিত্তিক ঋণ-আমানতের সুদহারসহ বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করা হতো। এখন সেটিও করা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এহেন কার্যক্রম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নাগরিকদের করের অর্থে পরিচালিত একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি উল্লিখিত তথ্যসমূহ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে বাধ্য। ২০০৯ সালে প্রণীত তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী, এসব তথ্য পাওয়া নাগরিকদের অধিকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি প্রকাশ না করে নাগরিকদের অধিকার খর্ব করেছে বৈকি। বিষয়টি রাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫২ বছর ধরে সাংবাদিকরা যে প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আসছিলেন, বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সব প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে সংকুচিত করতে থাকেন। সাংবাদিকদের জন্য যে বিশেষ পাস ছিল, সেটির কার্যকারিতাও রহিত করা হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বিশেষ পাস ব্যবহার করে সাংবাদিকরা নিয়মিত যাতায়াত করতে পারেন এবং প্রতিবেদন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এমন বাস্তবতায় কোন যুক্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দিলে কি ব্যাংক খাতে অনিয়ম হ্রাস পাবে? বরং সাংবাদিকরা সেখানে প্রবেশের সুযোগ পেলে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা দুর্নীতির সুযোগ আরও কম পাবে। তার কোনো তথ্য সাময়িকভাবে আড়াল করে রাখা গেলেও চূড়ান্ত বিচারে এটি প্রকাশ পাবেই। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্রে হয়েছিল। তৎকালীন গভর্নর তথ্য গোপন করে রেখেছিলেন এক মাসের অধিক। কিন্তু একসময় তা প্রকাশ পেয়ে যায়। কাজেই তথ্য আড়াল না করে তা সময়মতো প্রকাশ করাই শ্রেয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর হয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো বিবেচনা করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০