সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন অর্থমন্ত্রী, দুই সচিব, এসইসির চেয়ারম্যান, আইসিবির চেয়ারম্যান ও এমডিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এতে মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। তাছাড়া ডিএসইও সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। এটিও পুঁজিবাজারের জন্য ভালো দিক। কিন্তু সরকারের যে বিভাগগুলো কাজ করে সেখানে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে একটু বেপরোয়া ভাব লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে পুরো মানি মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং পরোক্ষভাবে পুঁজিবাজারকেও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু অবিবেচিত সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ এবং ইমপ্রেস ক্যাপিটাল লিমিটেডের এমডি ও সিইও মীর সাজেদ-উল বাসার।
মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, ২০১০-১১ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর বাজার যখন নেমে গেল তারপর ২০১৫ সাল থেকে এ ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি শুরু হলো। তখন থেকেই দেখেছি পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার অভাব ছিল না। যদিও প্রথমদিকে অর্থমন্ত্রী একটু উল্টোপাল্টা কথা বলতেন কিন্তু পরবর্তীতে তিনিও অনুধাবন করলেন, পুঁজিবাজার ছাড়া দেশের অর্থনীতিকে সেভাবে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। ফলে তিনিও খুব সংযত হয়ে গেলেন এবং বাজারের পক্ষে কাজ করার চেষ্টা করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, অর্থনীতির জন্য পুঁজিবাজার অনেক বড় একটি ইস্যু। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার সম্প্র্রতি জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী, দুই সচিব, এসইসির চেয়ারম্যান, আইসিবির চেয়ারম্যান ও এমডিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও উপস্থিত ছিলেন। এতে মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। তাছাড়া ডিএসইও সম্প্রতি পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। এটিও পুঁজিবাজারের জন্য একটি ভালো দিক বলে মনে করি। কিন্তু সরকারের যে বিভাগগুলো কাজ করবে সেখানে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে একটু বেপরোয়াভাব লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে পুরো মানি মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং পরোক্ষভাবে পুঁজিবাজারকেও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু অবিবেচিত সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যা আমরা ২০১০-১১ সালে দেখেছি এবং ২০১৭-১৮ সালে এসেও একই চিত্র দেখছি।
মীর সাজেদ-উল বাসার বলেন, আমরা জানি দেশের পুঁজিবাজারের আকার মোট জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ। এটিকে যদি আরেকটু বাড়ানোর দায়িত্ব আমাদের নীতিনির্ধারকদের। এখানে প্রথম দায়িত্ব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের, তারপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ওনাদের কাজ হচ্ছে শুধু নীতিগুলো প্রণয়ন ও কার্যকর করা। আর এ নীতিমালাগুলো দীর্ঘ মেয়াদের হওয়ার কথা। অথচ দুই দিনের মধ্যেই এডি রেশিও কমানোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। যেমন এক্সপোজার সীমার ক্ষেত্রে বাজারমূল্য হিসেবে ধরবে নাকি ক্রয় মূল্যের হিসাব ধরবে সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে আসলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কিন্তু এ দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এটি পুঁজিবাজারের জন্য একটি বড় সমস্যা বলে মনে হয়।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম