কেবল ওএমএস কি পারবে বাজার শান্ত করতে?

 

আমাদের নিত্যপণ্যগুলোর মধ্যে চাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। সময়ে সময়ে এর বাজার অশান্ত হয়ে ওঠাটাও অস্বাভাবিক নয়। তবে উদ্বেগ জাগে যখন দেখা যায়, পরিস্থিতিটি ক্ষণস্থায়ী না হয়ে মধ্যমেয়াদেও চালের চড়া দাম স্থিতিশীল হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি সে কারণে আমাদের দুশ্চিন্তা না জাগিয়ে পারে না। কয়েক মাস আগেও চালের দামে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা গিয়েছিল। তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দর ওঠানামাও করেছে কয়েকবার। সমস্যা হলো, এবারে প্রবণতাটি স্পষ্টভাবে খাড়া বলে প্রতীয়মান এবং তার শেষ প্রান্তটি এ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাজার শান্ত রাখতে কিছুটা দেরিতে হলেও ওএমএসে বাজার মূল্যের চেয়ে কমে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেটি অভিনব কিছু নয়। নতুনত্ব হচ্ছে, রাজনৈতিক বা অন্যান্য বিবেচনায় এতদিন ওএমএসের যে চাল বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়, এবার তা বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দাম অর্থাৎ ৩০ টাকায়। অস্বীকার করা যাবে না, চালের সংকটে ওএমএস থেকে বাজার মূল্যের ব্যবধান যত বেশি হবে, ‘লিকেজ’ তথা ওএমএসের চাল কালোবাজারে বিক্রির শঙ্কা তত বাড়বে। আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে ওই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের পক্ষে সহজ ছিল না। কেননা ‘১০-১৫ টাকায় চাল’ নিছক সীমিত আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য সহায়তা নয়; এর পেছনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বিদ্যমান। এরপরও কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হলো, সেটি নিয়ে ভাবিত অনেকে। তাদের প্রশ্ন, সেক্ষেত্রে সরকারি গুদামে চালের মজুত নিয়ে যেসব পরিসংখ্যান পরিবেশিত হয়, তার সত্যতা কতটুকু? যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে কি সেই পরিমাণ চাল রয়েছে গুদামগুলোয়? অভিযোগ উঠেছে, একশ্রেণির মজুতদার অসৎ উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ চাল গুদামজাত করেছে। কারও কারও মতে, এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের চালের সিন্ডিকেট ভেঙে দিলেই পরিস্থিতি শান্ত হবে। অবৈধভাবে গুদামজাত চাল জব্দ করার উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়ার এক বৃহৎ চাল ব্যবসায়ীর গুদামে অভিযানও চালানো হয়েছে সম্প্রতি। ওই ব্যবসায়ী যে পরিমাণ চাল অবৈধভাবে আটকে রেখেছেন বলে তথ্য ছিল, সেটি সঠিক হলে পরিমাণটি সরকারি গুদামগুলোয় বর্তমানে রক্ষিত মোট চালের দুই-তৃতীয়াংশ! তবে অভিযানে তেমন কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। এ সংকটকালে একশ্রেণির ব্যবসায়ী চাল অবৈধভাবে আটকে রেখেছে, বাজারে সরবরাহ হতে দিচ্ছে নাÑএমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই বলে দুর্বল তথ্যের ভিত্তিতে বৃহৎ চাল ব্যবসায়ীর গুদামে অভিযান পরিচালিত হলে তা হিতে বিপরীতও ঘটাতে পারে। এর প্রভাব ওএমএসের চালের ওপর পড়াও অস্বাভাবিক নয়। ফলে সব ধরনের পদক্ষেপের ক্ষেত্রেই সতর্কতা জরুরি। ওএমএসে কম দামে আতপ চাল বিক্রি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা সেভাবে আগ্রহী হচ্ছে না বলে এরই মধ্যে খবর এসেছে। তাছাড়া কেবল ওএমএস দিয়ে চালের বাজার শান্ত করা যাবে না, এটাও কাণ্ডজ্ঞানের মধ্যে পড়ে। সুতরাং ওএমএসের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখেই অগ্রসর হওয়া উচিত। বেসরকারি খাতের যৌক্তিক সম্পৃক্ততা এক্ষেত্রে প্রয়োজন। চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। অধিক পরিমাণ চাল আমদানির চিন্তাও সক্রিয়ভাবে রাখতে হবে মাথায়। সেক্ষেত্রে চালের বাড়তি দাম অবশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হলেও তাই আমদানি মূল্য বাড়ছে চালের। বেশি দামে কেনা চাল সরকারকে কম দামেই জোগাতে হবে জনসাধারণকে। বেসরকারি খাত স্বভাবতই সেটি করবে না। তবে তাদের আনা চালের দামে আমদানি ব্যয়ের যৌক্তিক প্রতিফলন যেন থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। ক্রেতাসাধারণ দেখতে চায়, চালের বাজারে কোনো রকম অস্বাভাবিকতা বিরাজ করছে না।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০