সাত বছর নগদ লভ্যাংশ না দিলেও বাড়ছে শেয়ারদর

নাজমুল ইসলাম ফারুক: সাত বছর ধরে বোনাস দিলেও নগদ লভ্যাংশ দিচ্ছে না ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত ‘কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড’। এরপরও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেনের শীর্ষে থাকছে। কী কারণে এর দর বাড়ছে, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে।

তথ্যমতে, কোম্পানির স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ ৪১৭ কোটি টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৮৩৫ কোটি টাকা অর্থাৎ স্থায়ী সম্পদের চেয়ে ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ। যদিও প্রতিষ্ঠানটির চলতি সম্পদের পরিমাণ চলতি দায়ের চেয়ে বেশি।

শেয়ারদর বাড়ার কারণ সম্পর্কে কোম্পানি সচিব মো. নুর হোসেন বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি রফতানিমুখী। আগের চেয়ে আমাদের কোম্পানির আয়, টার্নওভার বাড়ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানির শেয়ারে ঝুঁকছেন’ বলে মনে করছেন তিনি।

বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির দায় অনেক বেশি। ঋণের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২ বছরের জন্য রি-শিডিউল করেছে। আর এ অবস্থায় কোম্পানিটি নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস দিচ্ছে।’

লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুন ২০১৬ সমাপ্ত বছরে লভ্যাংশ দেওয়ার পর থেকে কোম্পানির শেয়ারদর কমতে থাকে, যা ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে যায়। নভেম্বর থেকে কোম্পানির শেয়ারদর আবারও বাড়তে থাকে। গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে কোম্পানির শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গতকাল কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ১৩ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। অর্থাৎ চার কার্যদিবসই কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় ছিল। কিন্তু কী কারণে হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বাড়ছে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব কোম্পানির ভিত্তি ভালো, সেগুলো সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেয়। এটা কোম্পানির জন্য যেমন ভালো, বিনিয়োগকারীদের জন্যও তেমনি সুবিধা। যেসব কোম্পানির ভিত্তি দুর্বল, সেসব কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ দেয়। এতে কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি নেতিবাচক ধারণা জš§ নেয়। এতে কোম্পানির শেয়ারদরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানির পর্ষদের উচিত বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেওয়া।

এ সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, একটি কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর তার ব্যবসা কেমন হচ্ছে তা বোঝা যায়। যেসব কোম্পানির ব্যবসা ভালো, তারা সবসময়ই বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেয়। যাদের ভিত্তি দুর্বল, তারা বোনাস লভ্যাংশ দেয় বলে জানান তিনি। নগদ লভ্যাংশ কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী দুয়ের জন্যই ভালো বলে মনে করেন তিনি।

কেয়া কসমেটিকস ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৭ ও ২০১২ সালে রাইট শেয়ার ইস্যু করে।

এদিকে কেয়া কসমেটিকসের সঙ্গে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বস্ত্র খাতের কেয়া নিটিং মিলস, কেয়া কটন মিলস ও কেয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড একীভূত হওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এর আগে ২০১১ সালে কেয়া কটন মিলস ও কেয়া স্পিনিং মিলস বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারে ৩০ টাকা প্রিমিয়াম ধরে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪০ টাকা নির্ধারণ করে প্রস্তাব দেয়। ২০১২ সালের জুন মাসে কেয়া কটন মিলস প্রিমিয়াম কমিয়ে প্রতিটি শেয়ারদর ৩০ টাকা নির্ধারণ করে আবেদন জানায়। কিন্তু উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সিআইবি রিপোর্ট ইতিবাচক না হওয়ায় তাদের আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

কেয়া কসমেটিকসের মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০