Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:55 pm

কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে বাজিমাত

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর): সারি সারি প্লাস্টিকের ট্রে সাজানো। তাতে সারিবদ্ধভাবে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির শাকসবজির চারা। তবে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, এসব চারার সঙ্গে মাটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নারকেলের ছোবড়ার টুকরার (কোকোডাস্ট) মধ্যে বীজ বপন করা হচ্ছে। মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় রোগ বালাইয়ের আক্রমণ নেই। মাটির স্পর্শ ছাড়াই কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে উৎপাদিত হচ্ছে শাকসবজি, ফল-ফুলসহ বিভিন্ন ফসলের চারা। এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে সাড়া ফেলেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান। এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে তিনি প্রতি বছর আয় করছেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক পদ্ধতিতে মাটির ব্যবহার ছাড়াই প্লাস্টিকের ট্রের মধ্যে কোকোডাস্ট ও জৈবসার ব্যবহার করে সবজি ও ফল-ফুলের বীজ রোপণ করে চারা উৎপাদন করেছেন কৃষক জিয়া। সারিবদ্ধভাবে সাজানো সেই ট্রেতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির শাকসবজি ও ফল-ফুলের চারা। তবে এসব চারার সঙ্গে মাটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নারকেলের ছোবড়ার (কোকোডাস্ট) মধ্যে বীজ রোপণ করা হচ্ছে। শোভা পাচ্ছে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটোসহ নানা ধরনের সবজির চারা। তার চারা উৎপাদনের এমন উদ্যোগ ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে পুরো জেলাজুড়ে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কোকোডাস্টে পানি ধারণক্ষমতা অনেক বেশি। তাই যেকোনো বীজ থেকে চারা গজায় খুব সহজেই। এ পদ্ধতিতে বীজতলায় একসঙ্গে লাখ লাখ চারা উৎপাদন সম্ভব। মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ নেই। এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে প্রতি দুই-তিন লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

জিয়াউর রহমান জানান, লেখাপড়া শেষে তিনি রাজশাহীর আকাফুজি এগ্রো টেকনালজি নামে একটি কৃষি খামারে চাকরি করতেন। ৮ বছর চাকরি শেষে বাড়ি ফিরে শুরু করেন নার্সারির ব্যবসা। কয়েক বছরেই লাভের মুখ দেখেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চারা উৎপাদন করে কৃষকদের মাঝে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতেন। লাভবান হওয়ায় এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে গোটা জমিতেই বীজতলা তৈরি করেন। খুলনা থেকে কোকোডাস্ট সংগ্রহ করে তাতে জৈব সারের (কেঁচো কম্পোস্ট) মিশ্রণ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার সবজি ও গাছের চারা উৎপাদন শুরু করেন। ট্রেতে বীজ বপন শেষে ঢেকে দেয়া হয় নেট দিয়ে। ফলে কোনো ধরনের কীটপতঙ্গ চারাগাছকে আক্রমণ করতে পারে না। চারাগুলো বেড়ে উঠে সুস্থ ও সবলভাবে।

তিনি আরও জানান, ক্যাপসিক্যাম, স্ট্রবেরি, হাইব্রিড মরিচ, লাউ, কুমড়া, তরমুজ, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফুলের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে এ পদ্ধতিতে। সব খরচ বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আয় হয় তার।

কৃষক রুবেল হোসেন ও হাবিব জানান, গেল বছর কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে উৎপাদিত বাঁধাকপির চারা নিয়ে জমিতে ভালো ফলন পেয়েছেন। তাই এবারও এসেছেন চারা সংগ্রহ করতে। সুস্থ, সবল ও বালাইমুক্ত চারা হলে ফসল ভালো হয়।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে জিয়াউর রহমানের চারা উৎপাদনের বিষয়টি আমরা জানি। কোকোডাস্টে পানি ধারণক্ষমতা অনেক বেশি। তাই যেকোনো বীজ থেকে চারা গজায় খুব সহজেই। জিয়াউর রহমানের বীজতলায় একসঙ্গে এক লাখ চারা উৎপাদন করা যায়। আমরা তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।