কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে আপাতত কোটা থাকছে না বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। একই ব্যাখ্যা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। তবে তিনি বলেছেন, আন্দোলনকারীদের দাবি মানার ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় রয়েছে।

কোটার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ গতকাল বুধবার সকালে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। এই আদেশের মানে কী, তা জানতে চাইলে রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, মানে হলো, যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে। হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। মনসুরুল হক চৌধুরী আরও বলেন, আপিল বিভাগ কিন্তু হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি, স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যাও দেখা যাচ্ছে। আপাতত নিয়োগে কোটা অনুসরণ করতে হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত দরকার হবে না।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তখন সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ। মানে হলো, ১০০ জনকে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ জনকে নিতে হতো কোটায়।

কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারীপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করেন।

হাইকোর্টের রায়ের পর থেকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন। তারা বুধবার তৃতীয় দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। এতে ঢাকায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। প্রধান সড়কগুলোয় যান চলাচল বন্ধ থাকায় পথচলতি মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আগামী ৭ আগস্ট শুনানির জন্য দিন রেখেছেন। শুনানির পর পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন। অর্থাৎ যেমন আছে, তেমন থাকবে। কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্রের ভিত্তিতে যেসব সার্কুলার দেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে কোটা থাকছে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বলেছেন, রাস্তায় আন্দোলন করে আদালতের রায় পরিবর্তন করা যায় না। কারও বক্তব্য থাকলে আদালতে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের উদ্দেশে আমি বলব, আপনাদের আর আন্দোলন করার কারণ নেই। এরই মধ্যে আদালত একটি আদেশ দিয়েছেন। আপনারা জনদুর্ভোগ করবেন না।’ অবশ্য আপিল বিভাগের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীরা বলেছেন, আদালতের সঙ্গে তাদের আজকের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সরকারের কাছে কোটা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চাইছেন। যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মূলত সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছেই কোটা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চাইছি।

এক দফা দাবি। এটি আদালতের এখতিয়ার নয়, এটি একমাত্র নির্বাহী বিভাগই পূরণ করতে পারবে। সরকারের কাছ থেকেই আমরা সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করছি।’ কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। সেটি হলো, সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করা। তারা বলছেন, এ কাজ সরকারের। আদালতের আদেশের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিকও বলেন, স্থিতাবস্থা মানে হলো, রিটের আগে যে অবস্থায় রয়েছে, সে অবস্থায় থাকবে। আপাতত কোটা নেই। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের পর।


বিষয়টি নিয়ে সরকারের করণীয় কিছু রয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে শাহদীন মালিক বলেন, কোটা কত হবে, তা তো আদালত ঠিক করে দেবেন না। সরকার হাইকোর্টের রায় মেনে নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করে কিছুদিন পরেই নতুন পরিপত্র জারি করতে পারে, যার মাধ্যমে কোটা সংস্কার করা হবে।
অবশ্য শাহদীন মালিক বলেন, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে যদি বলা থাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকতে হবে, তাহলে এভাবে সমাধান হবে না। বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করবে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, আইন করার বিষয়ে শাহদীন মালিক বলেন, আইন করলে ঝামেলা আছে। কারণ সব সময় পরিস্থিতি একই থাকবে না। ১০ বছর পরে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তখন আইন পরিবর্তন করতে হবে। সেটা ঝামেলার কাজ। পরিপত্র দিয়েই কাজ করা সম্ভব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০