নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এত কিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে। এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারও সংস্কারের কথা বলবে। কোটা থাকলেই ঝামেলা। সুতরাং কোনো কোটারই দরকার নেই।’ এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় হামলাকারীদের বিচার হবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সংসদ অধিবেশনে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
‘কোটা ব্যবস্থা বাদÑএটাই পরিষ্কার কথা’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত সমাজের কর্মক্ষেত্র প্রসারিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে, বৃত্তি পাচ্ছে, বিনা পয়সায় বই পাচ্ছে। কিন্তু এখন কোটা সংস্কারের নামে তারা রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছে। রাস্তায় বসে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভিসির বাড়িতে আক্রমণ হলো। এমন ভাঙচুর, বাড়ির ছবি দেখে মনে হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে এভাবে ভাঙচুর আর লুটপাট করেছিল। ভিসির ছেলেমেয়েরা ভয় পেয়ে লুকিয়ে ছিলেন। পরে সিসি ক্যামেরার রেকর্ডারও নিয়ে চলে গেল। যারা এসব ঘটিয়েছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মনে করেন না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে যারা ভাঙচুর-লুটপাট করেছে, ছাত্রদেরই সেগুলো খুঁজে বের করে দিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাও তা খুঁজে বের করবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের সম্মান করি। এখনও যেসব শিক্ষক বেঁচে আছেন, তাদের আমরা সম্মান করি, শালীনতা বজায় রাখি। সবারই তো আইন মেনে চলতে হবে।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে এখন সবাই ফেসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সেগুলো ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হলো যে, এক ছেলে মারা গেছে। রাতে হলের গেট ভেঙে রাস্তায় নেমে এলো ছেলেমেয়েরা। পরে ওই ছেলে যখন মারা যায়নি বলে নিজেই ফেসবুকে জানিয়ে দিল, তখন তাদের মুখটা কোথায় গেল?
আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্ররা দাবি করেছে, আমিও বসে থাকিনি। আমাদের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে পাঠিয়েছি। তিনি ছাত্রদের সঙ্গে বসেছেন। ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকেও নির্দেশ দিয়েছি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে। একটা সমঝোতা হলো। অনেকে মেনে নিল কিন্তু অনেকে মানল না। এ নিয়ে যখন আলোচনা হয়েছে, কথা হয়েছে, তাহলে কেন চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা পুড়িয়ে তছনছ করা হলো।’
মেয়েদের হল থেকে বেরিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। নানককে পাঠালাম, আলোচনা করলেন, তাদের ফিরে যাওয়ার কথা বলা হলো; কিন্তু মানল না, আন্দোলন চালিয়ে গেল।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। যারা আন্দোলনে নেমেছে, তারা আমার নাতির বয়সী। তাদের ভালো কিসে, তা আমরা জানি।’
তিনি বিসিএস পরীক্ষার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে কোটা ব্যবস্থা চলছে। ৩৩তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছে ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশের। আর ৩৫তম বিসিএসে হয়েছে ৬৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। যেখানে কোটা পাওয়া যাবে না, মেধাতালিকা থেকে দেওয়া হবে। এটা কিন্তু চলছে।’
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় পাস করেই এ পর্যায়ে আসতে হয়। তাদের দাবিতে তো বলা আছে, কোটায় পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ হবে। সেভাবেই নিয়োগ হচ্ছে। আর এ নিয়ে ঢাবি ও শাবি’র কিছু প্রফেসর তাল মিলিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গতকাল বুধবার সকালে তার সঙ্গে দেখা করেছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটাই থাকবে না, কোটার দরকার নেই; বিসিএস যে পদ্ধতিতে হয়, সেভাবেই হবে। নারীদের চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তারাও রাস্তায়। মেয়েরা যখন চায় না, তাহলে কোটার দরকার নেই।
এর আগে গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের জানিয়েছেন।
কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে
