Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 12:38 am

কোটা প্রজ্ঞাপন দাবিতে অবরোধে অচল রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে গতকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা শাহবাগে অবস্থান নেয়। এ সময় আট ঘণ্টা সড়ক অবরোধ থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হওয়াই ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রজ্ঞাপনের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে বিরক্তি প্রকাশ করেন। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বিলুপ্তির প্রজ্ঞাপনের দাবিতে আট ঘণ্টা পর রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের অবরোধ স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তবে সংগঠনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় শাহবাগ মোড়ে সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোটা বাতিল বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে আমরা আর কোনো সময়জুড়ে দিচ্ছি না। তবে আমরা কোটা বাতিল বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকব। সংগঠনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা অব্যাহত থাকবে, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আর আন্দোলন করব না। তবে ক্লাসে ফিরে যাব না প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত।’
এর আগে দুপুর থেকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগের রাস্তা অবরোধ করায় চারদিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। এছাড়া একদিকে মতিঝিল ও অন্যদিকে নিউমার্কেট পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে।
আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন জানিয়েছিলেন, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সরকার চাইলে কোটা বাতিল কিংবা আমাদের পাঁচ দফার ভিত্তিতে কোটা সংস্কার করতে পারে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালাও দেওয়া হয়। দফায় দফায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এরপরই সড়ক অবরোধে করে ফেলেন আন্দোলনকারীরা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কয়েক দফায় আলটিমেটাম শেষে গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
গত ৮ এপ্রিল থেকে টানা পাঁচ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এখনও এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে শিগিগিরই সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোটা নিয়ে আলোচনা (মন্ত্রিসভা বৈঠকে) হয়নি। কিন্তু কোটাটা প্রক্রিয়াধীন আছে, হয়তো কিছু দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। আমি যতদূর শুনেছি এর (কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন) সামারি (সার সংক্ষেপ) অলরেডি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে (প্রধানমন্ত্রীর কাছে) চলে গেছে। হয়তো আমরা শিগগিরই সিদ্ধান্ত পাব, ইনশাল্লাহ।’