কোম্পানিগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

দেশের পুঁজিবাজারের পরিসর ছোট। বাজার মূলধন কম। লেনদেন কম। তাছাড়া বাজারও স্থিতিশীল নয়। এ বাজারে বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কম। বিনিয়োগকারীরা হুজুগ ও গুজবে বেশি বিশ্বাস করে। সবকিছু মিলে বাজার এখনও দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে হলে বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তার আয়-ব্যয়, হিসাব-নিকাশ স্বচ্ছ হবে। পাশাপাশি বাজারেও আস্থা ফিরে আসবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সাবেক এমডি এমএ কাদের চৌধুরী এবং সুপারস্টার গ্রুপের সিএফও শফীকুল আলম এফসিএ, এফসিএমএ।

এমএ কাদের চৌধুরী বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে দুটি সুখবর থাকে। একটি ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের পর, অন্যটি জুন ক্লোজিংয়ের পর। এখন জুন ক্লোজিংয়ের উৎসব চলছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। যারা ভালো করেছে তাদের ঘোষণা আসবে। যারা এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন তারা অপেক্ষা করেছেন কী ডিভিডেন্ড আসে? পুঁজিবাজারে দুটি আশায় মানুষ বিনিয়োগ করে। কেউ বছর শেষে ডিভিডেন্ড নেওয়ার আশায়, আবার কেউ শেয়ারদর বাড়বে এবং প্রফিট সংগ্রহ করে বেরিয়ে যাবে, সে আশায়। কাজেই এখন বিনিয়োগকারীরা জুন ক্লোজিংয়ের ডিভিডেন্ডের অপেক্ষায়। অন্যদিকে ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের খুব বেশি বাকি নেই। ফলে মেধাবী বিনিয়োগকারীরা  এখন থেকেই বিনিয়োগ শুরু করছেন। যে কারণে লক্ষ্য করলে দেখবেন ব্যাংক খাতের শেয়ারদর ধীরে ধীরে বাড়ছে। তাছাড়া ব্যাংক খাতের যে কর্মক্ষমতা আমরা দেখছি তাতে আমি মনে করি, এ খাতে বিনিয়োগ করা উত্তম। ভালো প্রফিট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি আরও বলেন, দেশের আয়ের ৮০ শতাংশ আসছে বেসরকারি খাত থেকে। বাকিটা সরকারি খাত থেকে আসছে। বেসরকারি খাত হচ্ছে প্রবৃদ্ধি, সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মেশিন। আর এটি যদি আমরা বিশ্বাস করি তাহলে সরকারি পর্যায়ে বড় ব্যাংকগুলো রাখার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।

শফীকুল আলম বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন যে ধরনের সংস্কার এনেছে তাতে আমি মনে করি, যথেষ্ট কাজ হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরেকটু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। কারণ একটি প্রতিষ্ঠান যখন ভালো করে কিন্তু তার প্রমোটাররা কোনো ভুল করলেন বা ভুল তথ্য দিলেন তার প্রভাব গিয়ে পড়বে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ওপর। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ব্যাংক যখন ব্যক্তি মালিকানায় যাবে, তখন কি এর জবাবদিহিতা বাড়বে বা আরও ভালোভাবে পরিচালিত হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালিকানা একটা পয়েন্ট। প্রধান বিষয় প্রাইভেট বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে মালিকদের সহজে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। একটা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ওই ব্যাংক ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা জমা রেখেছে। এটা জনগণের সম্পদ, তাই জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মতামতের গুরুত্ব বেশি থাকে। ব্যাংকের ক্ষেত্রে একজন পরিচালক পাঁচ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারে। যদি ১৫ জন পরিচালক হন তাহলে ৭৫ শতাংশ তাদের, বাকিটা জনসাধারণ ধারণ করে। অস্বীকার করার উপায় নেই যেহেতু কারও সরাসরি মালিকানা থাকে না, তখন সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতারা জড়িত হন এবং ওই ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্টের জবাবদিহিতা কমে যায়। প্রাইভেটে গেলে জবাবদিহি বাড়ে। যেসব স্পন্সর ডিরেক্টরদের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো, তাদের প্রতিষ্ঠানের করপোরেট সুশাসন ভালো।

 

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০