Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 10:15 pm

কোম্পানির ইপিএস দেখে লেনদেন কমিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা

শেখ আবু তালেব: আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহেও পতন হয়েছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। কমেছে সূচক ও বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো নিজেদের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) প্রকাশ করেছে। এখন বিনিয়োগকারীরা তা পর্যবেক্ষণ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এজন্য শেয়ার ক্রয় কমে যাওয়ায় পতন হয়েছে সব সূচকের।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

জানা গেছে, গত সপ্তাহে বড় মূলধনি খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদরে পতন হয়েছে। জীবন বিমা ছাড়া আর্থিক সব খাতের শেয়ারদর কমেছে। অপরদিকে অনার্থিক কোম্পানি খাতের মধ্যে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক ছাড়া বাকিগুলোর শেয়ারদরে পতন হয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো গত সপ্তাহে তাদের ত্রৈমাসিক ও ষাণ¥াসিক অনিরীক্ষিত আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে এই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), এনএভি ও ক্যাশফ্লোর তথ্য রয়েছে।

বিনিয়োগাকরীরা এসব তথ্য দেখে এখন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মূল্যায়ন করবেন। খোঁজখবর নিবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন বিনিয়োগ পরিকল্পনায়Ñহাতে থাকা কোন শেয়ার ছাড়বেন ও নতুন কোথায় বিনিয়োগ করবেন। এজন্য অনেক বিনিয়োগকারীই লেনদেন কমিয়ে দিয়েছেন।

এছাড়া পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সবাই। সিদ্ধান্ত ঘোষণা হলেই এর প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে বলে জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

গত সপ্তাহে মোট পাঁচ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে দুই দিন ও পতন হয়েছে তিন দিন। সপ্তাহ শেষ হয়েছে নেতিবাচক ধারায়। সব মিলিয়ে সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সব সূচকেরই পতন হয়েছে। এর ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ১৭৬ কোটি টাকার বেশি।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হারিয়েছে ৪৪ দশমিক ২৪ পয়েন্ট। অপরদিকে গত সপ্তাহেও ডিএসইতে মোট ৩৬০টি কোম্পানি ও সিকিউরিটিজ লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। সপ্তাহ শেষে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ১১৮টির, কমে যায় ২১৮টির, দর অপরিবর্তিত থাকে ২২টির ও লেনদেন হয়নি দুটির।

তথ্য অনুযায়ী, আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে এক দশমিক ৭৮ শতাংশ। মোট লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ৮০ দশমিক ৫১ শতাংশ হয়েছে ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ারে।

খাতভিত্তিক গেইনার ও লোকসান চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, আর্থিক খাতের মধ্যে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দুই দশমিক শূন্য চার শতাংশ গেইন করে জীবন বিমা খাতের শেয়ার। এ খাতের মধ্য সবচেয়ে বেশি লোকসান গুনে এনবিএফআই খাতের শেয়ারধারণকারীরা। গত সপ্তাহে খাতটি সাত দশমিক ৩৮ শতাংশ লোকসান গুনে শেয়ারদরে। এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ড দুই দশমিক ৫৯ শতাংশ, সাধারণ বিমা দুই দশমিক ১৯ শতাংশ ও ব্যংক খাত এক দশমিক ৮১ শতাংশ লোকসান গুনে।

অপরদিকে তালিকাভুক্ত অনার্থিক খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গেইন করে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ার। এ খাতটি গত সপ্তাহে দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ গেইন করে। এছাড়া লোকসান গুনে টেলিকম খাত পাঁচ দশমিক ১০ শতাংশ, প্রকৌশল খাত তিন শতাংশ, বিদ্যুৎ খাত দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাত দশমিক শূন্য ৪৬ শতাংশ।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ১৩ শতাংশ অবদান রাখে বস্ত্র খাতের শেয়ার। এ সময়ে ওষুধ ও রসায়ন খাত ১০ শতাংশ, ব্যাংক খাত ছয় শতাংশ, সাধারণ বিমা সাত শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ছয় শতাংশ অবদান রাখে।

এছাড়া লেনদেনে সিমেন্ট খাত ১০ শতাংশ, আইটি পাঁচ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত পাঁচ শতাংশ, সিরামিক খাত এক শতাংশ, টেলিকম খাত চার শতাংশ, এনবিএফআই দুই শতাংশ ও মিউচুয়াল ফান্ড খাত এক শতাংশ অবদান রাখে।

খাতভিত্তিক লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে একক কোম্পানি হিসেবে সবচেয়ে বেশি শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ভিএফএস থ্রেড ডায়িং লিমিটেডের। সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ারদর বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া গেইনারের শীর্ষ ১০টিতে স্থান নিয়েছে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, মেট্রো স্পিনিং, এমএল ডায়িং, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, শাশা ডেনিমস, মালেক স্পিনিং মিলস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ ও জিবিবি পাওয়ার।

অপরদিকে এ সময়ে শেয়ারদর পতনে শীর্ষ ১০টির প্রথমে রয়েছে বিএসআরএম স্টিলস। সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর কমেছে ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া শীর্ষ দশে স্থান নিয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ ল্যাম্পস, এমবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ্ ফান্ড, এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ও জেমিনি সি ফুড।