পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিএসইসি

কোম্পানি তালিকাচ্যুতির আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: হঠাৎ করেই লেনদেন স্থগিত হয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেক্সিমকো সিনথেটিকের শেয়ারের। পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে এই কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করা হযেছে, যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। অন্যদিকে এই প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হওয়ারও আবেদন করেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন এই ধরনের দুর্বল কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে তারা লেনদেন স্থগিত ও কোম্পানির তালিকাচ্যুত হওয়াÑএই দুই আতঙ্কে ভুগছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল মতিঝিলের ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আলোচনার বিষয় ছিল দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে। কারণ বর্তমানে পুঁজিবাজারে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো আর্থিকভাবে খুবই দুর্বল। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। একইভাবে তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। এর মধ্যে তুংহাই নিটিং, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ফ্যামেলি টেক্স, ঢাকা ডায়িং, বিচহ্যাচারিসহ আরও বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে।

মূলত এই ধরনের কোম্পানিতে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তারাই আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত কিংবা কোম্পানি তালিকাচ্যুত হলে এখানে তাদের অর্থ আটকে থাকে। এই অর্থ ফেরত পেতে অনিশ্চয়তায় পড়তে হয় তাদের।

অন্যদিকে বেশ আগে থেকেই বিএসইসির কাছে দুর্বল কোম্পানির একটি তালিকা রয়েছে। সেসব কোম্পানিতেও কর্তৃপক্ষের নজরদারি রয়েছে। একইভাবে সম্প্রতি যেসব দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারেও চোখ রয়েছে তাদের। ফলে বিনিয়োগকারীদের চিন্তা আরও ভারী হচ্ছে।

বিএসইসিই একটি সূত্র জানা যায়, কোম্পানির বিষয়ে কোনো ধরনের অপরাধ চিহ্নিত হলে সেই কোম্পানিকে শাস্তির আওয়তায় আনা হবে, সেটা দুর্বল কিংবা ভালো মানের যেমনই হোক না কেন। কোনো কারণে যদি মনে হয় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হতে পারে, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করা হবে। এতে সাময়িকভাবে কিছু বিনিয়োগকারী সমস্যায় পড়লেও সার্বিক বাজারের জন্য ভালো হবে। পাশাপাশি অন্য বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেক্সিমকো সিনথেটিকস। ১৯৯০ সালের ১৮ জুলাই আরজেএসসি থেকে অনুমোদন নেয় বেক্সিমকো সিনথেটিকস। এরপর ১৯৯৩ সালের ৪ নভেম্বর এবং ১৯৯৫ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই ও সিএসই) তালিকাভুক্ত হয়।

কোম্পানিটি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে। তবে বর্তমানে ব্যবসা মন্দা ও মুনাফা হ্রাসের ফলে কোম্পানিটি পরিচালনা করাটা কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে ২০১৩ সাল থেকে কোম্পানিটি আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

কোম্পানি সর্বোত্তম চেষ্টার পরও গত সাত বছরে কাক্সিক্ষত উৎপাদন এবং লাভজনকতা বজায় রাখতে পারেনি। এতে কোম্পানিটি বড় ধরনের লোকসানে পড়ে যায়, যার ফলে কোম্পানির উৎপাদনও বন্ধ করতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে থেকে স্বেচ্ছায় তালিকাচুক্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সমস্যায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ এই কোম্পানিতে তাদের অর্থ আটকে পড়ে রয়েছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, নিয়মানুযায়ী কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হতেই পারে। তবে এখানে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টিও ভাবা উচিত। তাদের আটকে পড়া অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০