কোরবানির আগে-পরে বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা উচিত নয়

মাহমুদুল হক  আনসারী: মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এটিকে  কোরবানির ঈদও বলা হয়। মুসলিম দুনিয়া বারো মাসে দুটি ঈদ বা খুশি উদযাপন করে থাকে। একটি ঈদুল ফিতর, অপরটি ঈদুল আজহা। একটির নাম রোজার ঈদ। আরেকটি কোরবানির ঈদ। ৩০টি রোজা পালন করার মধ্যে পালন করেন ঈদুল ফিতর। খুশি বা আনন্দের দিন। এদিন মুসলমানরা নতুন জামা-কাপড় পরিধান করেন। সামর্থ্যরে মধ্যে ঘরে ঘরে সেমাই, শিরনি, বিরিয়ানি, পোলাও আরও নানা প্রকারের মুখরোচক  খাবার আপ্যায়নের জন্য আয়োজন থাকে ঘরে ঘরে। শিশু থেকে যুবক, কিশোর, বয়স্ক, সব বয়সের মানুষ আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে যান। ঈদের নামাজ শেষ করে সব ভেদাভেদ ভুলে একে অনোর সঙ্গে কুলাকোলি করে আনন্দ খুশি, বিনোদন করে। এক কাতারে নামাজে শরিক হয়। মুসলিমরা বলে, সকলে আমরা সকলের তরে প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। ভালোবাসার বার্তা বিলিয়ে দেয়। ছোট বড় সকলের মাঝে সেই দিন একটি বিশেষ আনন্দের অনুভূতি পরিলক্ষিত হয়। নামাজ শেষ করে সবাই আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে  ছুটে যান।  আত্মীয়, মুরব্বিদের সেবাযত্ন করেন। এভাবে টানা বেশ কিছু দিন  ঈদের আমেজ ঘরে ঘরে থাকে। দ্বিতীয়টি হলো ঈদুল আজহা। পশু কোরবানির ঈদ। ১০ জিলহজ তারিখে পালিত হয়, আর ১৩ তারিখ পর্যন্ত কোরবানি দেয়ার নিয়ম আছে। এ দিনসমূহে মুসলমানরা ইসলামের নবি হজরত ইব্রাহিম আঃ ওয়াসাল্লামের অনুসরণে সামর্থ্যবান পুরুষ  মহিলা হালাল পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। যারা কোরবানি আদায় করেন তারা অন্য আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীর মাঝে পশুর মাংস বণ্টন করেন। গরিব অসহায় দরিদ্র মানুষকে এই পশুর মাংস দিয়ে সামাজিক বৈষম্য দূর করে করে। ধনী-গরিব সকলেই এক কাতারে শরিক হয়ে বুকে বুক মেলায় খুশিতে। ধর্ম মানুষকে শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়। আনুগত্য ভালোবাসা তৈরি করে। ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠান সম্প্রতি আর ভালো বাসার জš§ দেয়। পশুর মাংস আসল উদ্দেশ্য নয়। সেখানে শিক্ষা হলো মনের পশুত্বকে ধ্বংস করা। পশুর চরিত্র যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব জাতিকে ধ্বংস করতে না পারে। প্রকৃত কোরবানির তাৎপর্য হলো সেটি। যাদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব তারা, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য কোরবানি করেন। কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্য নয়। কোরবানিকে সামনে রেখে সারাদেশে পশুর বাজার বসতে শুরু হয়েছে। এমনিতেই সারাদেশে নির্দিষ্ট স্থানে পশুর হাট আছে। কোরবানিকে উপলক্ষ করে আরও কয়েক হজার হাট বসবে। দেশব্যাপী এই হাটে বড়-ছোট, হাজার হাজার পশুর জমায়েত হবে। সেই হাটবাজারে শত শত কোটি টাকার পশু বেচা-বিক্রি হবে। এই বাজারে পশু তুলবার জন্য খামারিদের বছরব্যাপী পশুর যত্ন অব্যাহত আছে। কৃষক খামারি মানুষ, পশুর লালনপালনে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। লোন ও ধার নিয়েছে অনেকেই। বর্তমানে মানব খাদ্যের সঙ্গে পশুর খাদ্যের দাম বাড়ছে। তবুও যারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে তারা লাভ লোকসান মাথায় রেখে পশুর ব্যবসা ধরে রখেছে। কোরবানির হাটবাজার নিয়ে সরকারের একটা নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে তা মাঠে কার্যকর দেখা যায় না। যত্রতত্র হাটবাজার, রাস্তার ওপর পশু তুলে যানজট সৃষ্টি। সারাদেশে পশু হাজার হাজার বাজার রাস্তা দখল করে বসে থাকে। কেউ কারও কথা না শোনার সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে আছে। ফলে প্রশাসন যাই বলুক, পশু কারবারিরা রাস্তা দখল করবেই। এসব কারণে রাস্তায় যানজট তৈরি হয়, এক্সিডেন্ট বেড়ে যায়। নিয়ম মানতে খুব কম দেখা যায়। নির্দিষ্ট স্থানে পশু বিক্রি করলে সেখান থেকে স্থানীয় প্রশাসন কিছু টেক্স পেয়ে থাকে। যত্রতত্র বসলে সেখানে স্থানীয় প্রশাসনকে টাকা না দিয়ে বসা যায়। তবে তখন এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। এভাবে কোরবানির সময় সুযোগ নেয় একটি  অসাধু সিন্ডিকেট। রাতারাতি অনেক অর্থের মালিক বনে যায় তারা। তবে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় বেশি লাভ করতে পারে না। পশুর দাম ওঠানামা থাকে। ইন্ডিয়া, মিয়ানমার থেকে চোরা রাস্তায় পশু ঢুকতে পারলে দাম কিছুটা কমে যায়। আবার অনেক সময় নাও কমে। কারণ এখন দেশি গরুর মাংস হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানে দাম কমার লক্ষণ দেখছি না। তবুও যারা কোরবানিদাতা তারা দাম বাড়লে ও কোরবানি করবে। কোরবানি করা না করা সেটা মুসলমানদের ধর্মীয় ও নিজস্ব বিষয়। কিন্তু শহর, নগর, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সবার জন্য দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাসাবাড়ির আঙিনায় ময়লা ফেলা, পশু কোরবানির আগে-পরে তার উচ্ছিষ্ট যত্রতত্র ফেলা উচিত নয়। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলে সিটি করপোরেশনকে সাহায্য করতে হবে। অন্যথায় এসব ময়লার কারণে রোগ হবে, জীবাণু ছড়াবে। রাস্তায় পশুবাহী গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি যেন না হয়। অযাচিতভাবে পুলিশি চেক ও হয়রানির অবসান চাই। জাল টাকা শনাক্ত করে পশুর গাড়ি এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবদান জাতি সর্বদা স্মরণ করে। যে হারে ছিন্তাই, হাইজাকার, মলমপার্টির উৎপাত বেড়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া ব্যবসা করা খুব কঠিন। আর নিরাপদ থাকা আরও কঠিন। ইসলাম প্রিয় মুসলিমের উচিত,  ধর্মীয় নিয়ম, নীতি মেনে কোরবানির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা। উচ্ছিষ্ট, ময়লা বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। পশুর চামড়া  যথানিয়মে সংরক্ষণ করা। চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করা। অনাথ এতিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসা।

মুক্ত লেখক, চট্টগ্রাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০