কোরবানির পশুর বর্র্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে

সাকিবুল হাছান : ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বছর ঘুরে দিনটি আসে মানবমনের ভোগের ক্ষুধা আর পাশবিক চেতনাকে মিটিয়ে ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ করে ভ্রাতৃত্বের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত করতে। বাংলাদেশে আগামী ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।

কোরবানির ঈদের আনন্দটা একটু ভিন্ন রকমের হয়। সবচেয়ে উপভোগ্য হলো পশু কোরবানি করা। মানুষ হাটে গিয়ে পছন্দমতো পশু ক্রয় করে।

আমরা আল্লাহর স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করি ঠিক, সেইসাথে আমাদের কোরবানির সঙ্গে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে তাহলে স্রষ্টা আরও বেশি খুশি হবেন। কারণ, মুসলিম ধর্মে বলা আছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হলো ইমানের অঙ্গ। আমাদের মধ্যে অনেকে কোরবানির পশুর রক্ত, বর্জ্য আর হাড়-হাড্ডি যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন; যার কারণে পচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং পরিবেশদূষণ ও বিভিন্ন রোগব্যাধি বিস্তার দেখা দেয়। কোরবানিদাতা যখন তার কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিবেশ, সমাজ আর জীবনের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে সেটা ভুলে থেকে জবাইকৃত পশুর মাংসটা নিয়ে ঘরে ফিরে যায়Ñতখন তার কোরবানিটা যে ভোগের নেশাকে পূরণের উদ্দেশ্যে, সেটাই প্রমাণ হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। অধিদপ্তরের হিসাবে, এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। এতটাই বেড়েছে যে দেশের খামারিরা এবারের পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য যতসংখ্যক কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করেছেন, এর আগে কখনও তা করতে পারেননি। এবার গরু-মহিষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ (১০.৬৭%), যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

সারাদেশে একদিনে এই পরিমাণ পশু কোরবানি করা হবে। এই বিশাল পরিমাণ পশুর বর্জ্য পরিবেশে দূষণের কারণ হবে কি না; সে প্রশ্ন থেকেই যায়! পরিতাপের বিষয় হলো, কোরবানির পরে পশুর বর্জ্যরে কারণে পরিবেশ দূষিত হয় তা নিয়ে আমরা খুব বেশি সচেতন না। পশু কোরবানির পরে অনেকেই পশুর বর্জ্য খোলা স্থানে রেখে চলে যায়। পশুর রক্ত রাস্তাঘাটে পড়ে থাকলে প্রচুর দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এতে পরিবেশ দূষিত হয়। কোরবানি করা যেমন ওয়াজিব যা পালন করা স্রষ্টার আদেশ, তেমনি পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও স্রষ্টার আদেশ এবং আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোরবানির জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয় কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ বছর পশু কোরবানির জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দিচ্ছে না রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা ও কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সুবিধার্থে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি ওয়ার্ডে কয়েকটি স্থান নির্দিষ্ট করে দিত সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু স্থানে থাকত পশু কোরবানির সব ব্যবস্থা। এ বছর সেই বিশেষ স্থানও থাকছে না। তাই অতীতের মতো যত্রতত্র পশু কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও উভয় সিটি করপোরেশন বলছে, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করবে সেই সঙ্গে  নগরবাসীকে বরাবরই অনুরোধ করা হয়েছে; তারা যেন সুবিধাজনক স্থানে পশু কোরবানি করেন এবং নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য রাখেন। কোরবানি শেষে পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে স্থানটা ভালো করে ধুয়ে দেন। তাহলে পরিবেশ ভালো থাকবে, বর্জ্য অপসারণও সহজ হবে।

কোরবানির পশুর বর্জ্যে আমাদের করণীয় হবে, কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য বসতবাড়ি থেকে সম্ভাব্য দূরবর্তী কোনো পরিষ্কার স্থান বেছে নেয়া। জবাইয়ের জায়গা ভালো করে পরিষ্কার করে একটি গর্ত খুঁড়ে নিতে হবে, যাতে জবাইকৃত পশুর সম্পূর্ণ রক্ত তাতে জমা হতে পারে। এমনভাবে জবাই করতে হবে যেন পশুর রক্ত গর্তেই জমা হয়, চতুর্দিকে ছড়িয়ে না পড়ে। জবাইয়ের পরে গর্তটা মাটি দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দিতে হবে যেন রক্ত-পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকায় হলে নির্দিষ্ট স্থানে সেগুলো রেখে দিতে হবে, যাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা  যথাসময়ে সেগুলো অপসারণ করতে পারেন। চামড়া ছাড়ানো ও মাংস সংগ্রহের পরে ওই জায়গাটা ভালোভাবে ধুতে হবে এবং ব্লিচিং পাউডার সেখানে ছিটিয়ে দিতে হবে, যাতে পরিবেশ দূষণ কিংবা জনদুর্ভোগের কারণ না হয়। এতে দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশের মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা যাবে। তাই এই বিষয়ে নিজে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকেও সচেতন করতে হবে।

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০