নিজস্ব প্রতিবেদক: গোল্ডেন হার্ভেস্ট আইসক্রিম লিমিটেড (জিএইচআইএল) এবং গোল্ডেন হার্ভেস্ট ফুডস লিমিটেডের (জিএইচএফএল) মালিকানাধীন নতুন প্রাইভেট কোম্পানি কোল্ড চেইন বাংলাদেশ লিমিটেড (সিবিবিএল)। নবগঠিত প্রতিষ্ঠানটি একটি বিশ্বমানের কোল্ড স্টোরেজ এবং লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি করেছে।
বাংলাদেশে সমন্বিত কোল্ড চেইন এবং তাপনিয়ন্ত্রিত লজিস্টিক সরবরাহের ক্ষেত্রে এটিই সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠান। গোল্ডেন হার্ভেস্টের ৭০ শতাংশ এবং আইএফসি’র ৩০ শতাংশ বিনিয়োগে ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই পাইলট প্রকল্পে দেশের ১২টি স্থান থেকে তাপনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরনের পণ্য সংরক্ষণ এবং পরিবহন সেবা প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশে কোল্ড চেইনে অগ্রণী এই নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের পচনশীল পণ্য, যেমনÑফার্মাসিউটিক্যাল, ফ্রোজেন ফুড, দুধ ও মাংস, ফলমূল, সবজি, বেকারি ও কনফেকশনারি এবং আইসক্রিম প্রভৃতির উন্নতমানের সংরক্ষণ এবং তাপনিয়ন্ত্রিত পরিবহনসেবা প্রদান করা হবে। সেবাগুলোর মধ্যে থাকবে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি সংরক্ষণ, বাল্ক ট্রান্সপোর্ট, ক্রস-ডকিং, লাস্ট-মাইল ডেলিভারি, ড্রপ শিপিং ইনেবলার এবং পণ্য-সম্পর্কিত বিশেষায়িত চাহিদাভিত্তিক সেবা।
দেশের লজিস্টিকস অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি কোল্ড চেইন বাংলাদেশ এই উদ্যোগের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি, পরিবহন ক্ষতি হ্রাস এবং সরবরাহকৃত পণ্যের মানোন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বাড়তি সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা প্রদান করে দেশের অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ অবদান রাখবে।
এই প্রকল্প সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে গোল্ডেন হার্ভেস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান রাজীব সামদানী বলেন, ‘প্রায় এক দশক ধরে আমাদের প্রস্তুতকৃত ফ্রোজেন ফুড ও আইসক্রিমের নিরবচ্ছিন্ন পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি একটি কোল্ড চেইন নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং সেটি চালিয়ে যাওয়া কতটা কঠিন। প্রত্যেকটি দেশের জন্যই এ ধরনের অবকাঠামো অতিপ্রয়োজনীয় এবং উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে একেবারে আবশ্যক। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই ব্যবস্থা অনেক দিন ধরে থাকলেও বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। এ অবস্থাই আসলে আমাদের বিশ্বমানের কোল্ডস্টোরেজ অবকাঠামো স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করেছে, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরা প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে পারবেন। ভোক্তাদের সুবিধা প্রদান এবং সেরা সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে আমরা এমন একটা অবকাঠামো তৈরি করছি, যা একই সঙ্গে প্রযুক্তিনির্ভর, স্বয়ংক্রিয় ও নমনীয়। তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরের নিবিড় সম্পৃক্ততা এবং সর্বাধুনিক ও কার্যকর সফটওয়্যারের ব্যবহার আমাদের সুযোগ-সুবিধা এবং সেবার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই কোল্ডস্টোরেজ নেটওয়ার্ক আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে।’
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ‘এ’ ক্যাটেগরির এ কোম্পানিটি ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১১৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট ১১ কোটি ৯৯ লাখ ৯ হাজার ৭৯০টি শেয়ার রয়েছে। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যমতে মোট শেয়ারের ৩৩ দশমিক তিন শতাংশ উদ্যোক্তা বা পরিচালকের কাছে, প্রতিষ্ঠানিক ৪৬ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্য আয় (পিই) অনুপাত ১৩ দশমিক ৮২ এবং হালনাগাদ অনিরীক্ষিত ইপিএসের ভিত্তিতে ১৩ দশমিক ৬৫।
এদিকে গতকাল ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বা দুই টাকা ৫০ পয়সা বেড়ে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ২৮ টাকা ২০ পয়সায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দরও ছিল ২৮ টাকা ২০ পয়সা। দিনজুড়ে তিন লাখ ৫৩ হাজার ৫৯১টি শেয়ার মোট ২৩০ বার হাতবদল হয়, যার বাজারদর ৯৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। দিনভর শেয়ারদর সর্বনিম্ন ২৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ টাকা ২০ পয়সায় হাতবদল হয়।