নিজস্ব প্রতিবেদক: কৌশলগত বিনিয়োগকারী (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) হিসেবে এবিজি লিমিটেড ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সঙ্গে এক চুক্তি সই হয়েছে। গতকাল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ হোটেলে এক অনুষ্ঠানে চুক্তি সই হয়। অনুষ্ঠানে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম ফারুক এবং এবিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পক্ষে চুক্তি সই করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়া-উল-ইসলাম, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএসইর পরিচালক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। প্রতি বছর লভ্যাংশের কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে যাচ্ছে। তাই এসব বিদেশি কোম্পানিকে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, কোম্পানি আইন থেকে শুরু করে ডিমিউচুয়ালাইজেশনেও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যত্রতত্র ট্রেডিং না হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডিং হওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে হবে। এজন্য এ এক্সচেঞ্জ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।
বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে নয়, দেশের বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশ স্বাবলম্বী হবে বলে জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। সেই সঙ্গে বড় ১০০ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, যদি বড় ১০০ কোম্পানির নাম বলতে বলা হয়, তাহলে কোনো দ্বিধা ছাড়াই তাদের নাম বলা যাবে, যারা খুব ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু তাদের দেশের প্রতি তেমন মায়া দেখা যায় না। ফলে দেশে ভালো ব্যবসা করে বিদেশে অর্থ জমানোর বিষয়ে তাদের আগ্রহ বেশি। কিন্তু সেটা কখনোই উচিত নয়। বরং বসুন্ধরা গ্রুপ যেমন দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কাজ করে, ঠিক তেমনি বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছে তিনি।
দেশের অর্থনীতিকে মানি মার্কেট ও পুঁজিবাজার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) একটি শক্তিশালী বাজারে পরিণত হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সিএসইর পাশে থেকে সবসময় কাজ করে। তারা এ এক্সচেঞ্জের ভালো চান। অনেক হতাশার খবর শোনা যায়। তবে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা বলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। শিগগিরই দেশের সব সমস্যা কেটে যাবে।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বসুন্ধরা যে কাজটি হাতে নিয়েছে সেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের যাত্রা চট্টগ্রাম থেকেই শুরু হবে। এটি খুব শিগগিরই সফলতার মুখ দেখবে।
দেশের পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান অনেক কম। এ ধরনের বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার। এটি বাজারের বড় দুর্বলতা বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
এ সময় তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আরও বাড়ানো উচিত। এছাড়া বাজার মূলধন ও জিডিপির মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকা দরকার। বসুন্ধরা গ্রুপ যেমন ঝুঁকি নিয়ে পুঁজিবাজারে এসেছে, যারা এখনও আসেনি তারা যেন আসে। কারণ বসুন্ধরা সব কাজে সফলতা পেয়েছে।
এ সময় সিএসই’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সঙ্গে বসুন্ধরার এজিবি লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হলো। এটি দেশের পুঁজিবাজারের জন্য নতুন মাইলফলক।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে বর্তমানে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া রিজার্ভ নিয়ে কিছুটা চাপ আছে। তবে খুব দ্রুত এসব সমস্যা কেটে যাবে।
প্রসঙ্গত, এ চুক্তির মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেড দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার সিএসইর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে কার্যক্রম পরিচলনা করবে। এবিজি লিমিটেড সিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করার মাধ্যমে এক্সচেঞ্জটির মালিকানায় কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো। দেশের পুঁজিবাজারে সার্বিক উন্নয়ন ও কার্যকরী সমৃদ্ধি আনয়নের লক্ষ্যে এবিজি লিমিটেড বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে, যা পুঁজিবাজারকে আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, বিএসইসির ৮৪০তম কমিশন সভায় শর্তসাপেক্ষে সিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী (স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টর) হিসেবে এবিজি লিমিটেডকে অনুমোদন দেয়া হয়। তথ্যমতে, সিএসইর পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ও আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিশন এবিজি লিমিটেডকে কতিপয় শর্ত ও সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন সাপেক্ষে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।