শেখ আবু তালেব: করোনা মহামারির সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এই দুঃসময়ে বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই শেয়ার লেনদেন থেকে বিরত থাকছেন। কিন্তু বিনিয়োগ পরিকল্পনায় থেমে নেই কৌশলী। তাদের তৎপরতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে বাড়ছে বা কমছে লেনদেনের পরিমাণ। মূলত ওষুধ ও রসায়ন, ব্যাংক এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এই তিন খাতকে কেন্দ্র করেই শেয়ার হাতবদল করছেন তারা।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। তারা বলছেন, গত সপ্তাহেও ডিএসইতে আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমেছে চার দশমিক ২৫ শতাংশ।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৬০ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। সপ্তাহ শেষে দেখা গেছে, আগের চেয়ে এর মধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় মাত্র ১৯টির, কমে ৩৯টির, দর অপরিবর্তিত থাকে ২৮৫টির এবং লেনদেন হয়নি ১৭টির।
লেনদেন কমে আসায় ডিএসইর সূচকগুলো কমেছে একইসঙ্গে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগেও সপ্তাহের চেয়ে কমেছে ছয় দশমিক ৭৩ পয়েন্ট, ডিএসইএস এক দশমিক ২৩ পয়েন্ট ও ডিএস৩০ ছয় দশমিক ৩২ পয়েন্ট। পাশাপাশি কমেছে ১৭৮ কোটি টাকা।
জানা গেছে, এক টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হওয়ায় পুঁজিবাজারে লেনদেন পরিমাণ এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। সূচকের নি¤œগামী আচরণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লেনদেন থেকে বিরত থাকছেন। করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে কেউ আর লোকসান দিতে চাচ্ছেন না নতুন করে।
এর মধ্যেও কিছু বিনিয়োগকারী এখনও লেনদেন করছেন। শেয়ার হাতবদল করছেন। তাদের চৌকস তথা কৌশলী বিনিয়োগকারী হিসেবে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা। লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত তিনটি মৌলভিত্তির খাতের কোম্পানির শেয়ারের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। এসব কোম্পানি মহামারির সময়েও ব্যবসা করে চলেছে। ডিএসইর লেনদেনেও তাদের ভূমিকা বেশি।
গত সপ্তাহের মোট লেনদেনে এই তিন খাতের মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাতের অবদান ছিল ৩৮ দশমিক আট শতাংশ, যা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ব্যাংক ১৭ দশমিক আট শতাংশ ও জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত ১৫ দশমিক এক শতাংশ অবদান রাখে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে গেইনারের শীর্ষে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। খাতটি শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ গেইন করে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুনেছে শূন্য দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। এই সময়ে শেয়ারদর হারিয়েছে জীবন বিমা খাত, মিউচুয়াল ফান্ড ও খাদ্য এবং আনুষঙ্গিক খাত। অবশ্য পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা এটিকে দর সংশোধন হিসেবে দেখছেন গত সপ্তাহে।
ডিএসইর লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে গত সপ্তাহে ওষুধ ও রসায়ন খাত। এরপরই রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ১৬ শতাংশ, জীবন বিমা খাত দুই শতাংশ, প্রকৌশল খাত এক শতাংশ, খাদ্য এক শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড সাত শতাংশ, বস্ত্র দুই শতাংশ, ব্যাংক ১৮ শতাংশ ও এনবিএফআই এক শতাংশ।
একক কোম্পানি হিসেবে ডিএসইতে গেইনারের শীর্ষে উঠে এসেছে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস। গত সপ্তাহে শেয়ারটির দর বৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ। এরপরই রয়েছে রেকিট বেনকিজার, আইসিবি এমপ্লইস প্রভিডেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান স্কিম, লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, ন্যাশনাল টি কোম্পানি, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড, প্রাইম ব্যাংক, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এক্সিম ব্যাংক অব বাংলাদেশ।
অন্যদিকে শেয়ারদর হারানোর শীর্ষ দশটিতে উঠে বেক্সিমকো সিনথেটিকস। গত সপ্তাহে কোম্পানিটি সর্বোচ্চ দর হারিয়েছিল। সপ্তাহ শেষে ছয় দশমিক ৭৮ শাতংশ শেয়ারদর হারায় কোম্পানিটি। এরপই রয়েছে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকালস, ফিনিক্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এসিআই ফরমুলেশনস, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িং ও দেশ গার্মেন্টস।