নিজস্ব প্রতিবেদ: বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের কিডনি অন্য যে দুজনের শরীরে স্থাপন করা হয়েছিল, তাদের একজন ভালো হয়ে বাড়ি ফেরার পথে। আরেকজন মারা গেছেন কিডনি প্রতিস্থাপনের ১০ দিনের মাথায়।
যার কিডনি অন্য দুজনের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, তার নাম মো. মাসুম, বয়স ৩৮ বছর। গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা মাসুম ব্রেইন ডেড অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেদিনই রাত সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়।
এর মধ্যে বিএসএমএমইউতে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ৪৬ বছর বয়সী তাহমিনা ইয়াসমিন পপির দেহে। তিনি এখন সুস্থ আছেন। তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ঢাকার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় ৪৪ বছর বয়সী এক যুবকের দেহে। তিনি গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে মারা যান। তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি চিকিৎসকরা।
ক্লিনিক্যালি ডেড বা ব্রেইন ডেড রোগীর কিডনি নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করার এ পদ্ধতিকে বলা হয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট।
বিএসএমএমইউতে কিডনি প্রতিস্থাপনে নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তাহমিনা ইয়াসমিন পপি এখন ট্রান্সপ্ল্যান্ট আইসিইউতে ভর্তি। ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘রোগীর অবস্থা ভালো। ক্রিয়েটিনিন ওয়ানে আছে। ইউরিন ডিসচার্জ ভালো আছে। আজ-কালের মধ্যে ছেড়ে দেব আমরা।’
পপির মা খুরশিদা পারভীন বলেন, ২০২০ সালে তার মেয়ের কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। তাকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছিল। সাত-আট মাস আগে অবস্থা আরও খারাপ হলে চিকিৎসকরা কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। কিন্তু পরিবারের সবাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ায় নিজেদের কেউ কিডনি দান করতে পারছিলেন না।
পপির চিকিৎসা চলছিল বিএসএমএমইউতে। গত মাসে হঠাৎ চিকিৎসকরা জানান, একজনের মরণোত্তর কিডনি দানের কথা আলোচনা হচ্ছে। সেজন্য হাসপাতালে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। পপির পরিবার তখন নাম লিখিয়ে রাখেন। ২৫ জানুয়ারি সকালে বিএসএমএমইউ থেকে কল আসে।
কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় ৪৪ বছর বয়সী এক পুরুষের দেহে। তিনি সাত বছর ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালেই নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা হচ্ছিল তার। ২৫ জানুয়ারি রাতে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান কিডনিগ্রহীতা ওই ব্যক্তি।
কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন করার জন্য পাঁচ রোগীকে বাছাই করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ওই রোগীকেই সবচেয়ে বেশি সবল মনে হয়েছিল। কিডনি প্রতিস্থাপন করার পর রোগী কিছুটা সুস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু পরে অবস্থার অবনতি হয়।
তিনি বলেন, ‘তার অ্যাজমার ইতিহাস ছিল, যা তার পরিবার আমাদের কাছে গোপন করেছিল। অস্ত্রোপচারের পর তিনি সুস্থ হয়েছিলেন কিছুটা। কিন্তু এরপর অবস্থা খারাপ হয়। হঠাৎ করে ব্লাড প্রেশার কমে গিয়েছিল, সেটা আর তোলা যায়নি। যখন শ্বাসকষ্ট কমল না, তখন আমরা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে দেখিয়েছি, মেডিকেল বোর্ডও গঠন করেছিলাম। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।’
এর আগে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি বিএসএমএমইউতে দেশে প্রথমবারের মতো একজন মৃত মানুষের শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা অপর দুজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। সারাহ ইসলাম নামে ২০ বছরের ওই তরুণীকে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ‘ব্রেইন ডেড’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সেদিন রাতেই তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুজন নারীর শরীরে।
সারাহর চোখের কর্নিয়া দেয়া হয় অপর দুজনকে। তার কিডনি নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে আছেন শামীমা আক্তার নামে এক নারী। তবে অন্যজনের মৃত্যু হয়েছে।