ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে

দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসার সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সেবার সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনা’। দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ক্যানসার চিকিৎসায় সময় লাগে বেশি, ব্যয়ও বেশি। চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। ক্যানসার চিকিৎসায় আমাদের অগ্রগতি ধীরে হলেও তা কম নয়। তবে দেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, এর চিকিৎসার সুযোগ সে হারে বাড়ছে না। তাই ক্যানসার চিকিৎসার সুবিধা সংবলিত বিশেষায়িত হাসপাতালের সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

বর্তমানে দেশে ১৫টি সরকারি হাসপাতাল এবং ২২টি বেসরকারি হাসপাতালে ক্যানসারের সর্বাধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০০ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ নিয়মিতভাবে রেডিয়েশন এবং মেডিকেল অনকোলজি সেবা দিচ্ছেন। সেরা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যাধুনিক চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি এবং ডায়াগনস্টিকের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের বিশ্বমানের কমপ্রিহেননিভ ক্যানসার চিকিৎসা দিতে সক্ষম। দেশে এখন ক্যানসারের ওষুধও উৎপাদন হচ্ছে। আবার রোগীও বাড়ছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রকে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। ক্যানসারে জীবনাচার এবং নিরাপদ খাদ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যাতে রোগীদের রাজধানীতে না আসতে হয়, সে জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। ক্যানসারে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা প্রয়োজন। অনেক রোগীর ঢাকায় স্বজন নেই, হোটেলে থাকার আর্থিক সামর্থ্য নেই। ঢাকা শহরে তাদের হাসপাতালের পাশে ছোট এক কক্ষের বাসা ভাড়া নেয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে রোগনির্ণয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা খরচ বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালের চেয়ে কম। ফলে সারাদেশের রোগীর চাপ এই হাসপাতালে।

বেশি মানুষকে সেবাদান নিশ্চিত করতে অন্তত বিভাগীয় পর্যায়ে ‘জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। রাজধানীতে চিকিৎসা নিতে এসে ওষুধপথ্যের খরচের চেয়ে থাকা-খাওয়ার খরচ বেশি পড়ে। আমাদের দেশে মুখগহ্বর, জরায়ুমুখ ও স্তন, এ তিন ক্যানসারে আক্রান্তের বেশি। মুখগহ্বরের চেকআপ দন্ত চিকিৎসকের মাধ্যমে এবং জরায়ুমুখে ক্যানসার স্ক্রিনিং ভায়া টেস্টের মাধ্যমে বিনা খরচে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্ভব। আর স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের পরীক্ষা নারী নিজেই করতে পারেন। না পারলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করতে পারেন। জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধে ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সী সব নারীকে সম্প্রসারিত টিকাদন কর্মসূচির (ইপিআই) টিকা কার্যক্রমে এইচপিভি দেয়া আবশ্যক। এতে রাষ্ট্রের বেশি খরচ হবে না। অথচ রক্ষা পাবে বহু অমূল্য জীবন।  বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ানো গেলে তা স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী অবদান রাখবে বলেই আমরা মনে করি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০