কানাডার টেরি ফক্সের নাম কম-বেশি আমরা শুনেছি। ২২ বছরের এ যুবক আক্রান্ত হয়েছিলেন ভয়াবহ ক্যানসারে। চিকিৎসার এক পর্যায়ে তার একটি পা কেটে ফেলা হয়। কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারেনি টেরিকে।
জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে নিজের কথা না ভেবে ভাবতে শুরু করেন অন্যদের কথা। অন্যদের যেন তার মতো দুরবস্থার শিকার না হতে হয়, এজন্য কী প্রয়োজনÑতা ভাবতেই মাথায় আসে গবেষণার কথা। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা যদি আরও গবেষণার সুযোগ পান, তাহলে এক সময় এ রোগটাকে জয় করা সম্ভব। এই ভাবনা থেকে অর্থ সংগ্রহের কাজে লেগে পড়েন টেরি ফক্স। অর্থ সংগ্রহের জন্য এক পা নিয়েই শুরু করেন দৌড়। মাঝে একটি কৃত্রিম পা লাগানো হয়। ১৪৩ দিনে তিনি অতিক্রম করেন ৩.৩৩১ মাইল পথ। সংগ্রহ করেন ১০০ মিলয়ন ডলার।
পরে ফুসফুসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ায় থেমে যায় তার স্বপ্নযাত্রা। মাত্র ২৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার সংগৃহীত অর্থের পুরোটাই দান করা হয় ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারে।
নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশে হবে বিশ্বমানের ক্যানসার হাসপাতাল। এজন্য অর্থ সংগ্রহে টেরি ফক্সের মতো তিনিও দৌড়াবেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াÑএমন স্বপ্ন ছিল তার।
টেরি ফক্স আজ নেই, নেই হুমায়ূন আহমেদ। তারা না থাকলেও যে স্বপ্নটা আমাদের দেখিয়েছেন, আজও তা লালিত সবার মনে। তাই বিশ্ব ক্যানসার দিবসে দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ‘ক্যানসার সচেতনতা দৌড় ২০১৮’ আয়োজন করে হুমায়ূন আহমেদ ভক্তদের সংগঠন ‘হিমু পরিবহন’।
৪ ফেব্রুয়ারি পালন হয় বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ‘আমরা পারিÑআমি পারি’ সেøাগানে সবাইকে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন করতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আয়োজন করা হয় ‘ক্যানসার সচেতনতার জন্য দৌড়’। গত বছর থেকে হিমু পরিবহন, ঢাকা আয়োজন করে আসছে এ দৌড়। টেরি ফক্স কিংবা হুমায়ূন আহমেদের মতো কাউকেই যেন আর আমরা না হারাই ক্যানসারের কারণে। তাই দেশের সব স্থানে ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিই এ দৌড়ের লক্ষ্য।
বিকনের সহযোগিতায় হিমু পরিবহনের এ আয়োজনে ক্যানসার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে উপস্থিত হয়েছিলেন ‘উš§াদ’ সম্পাদক ও হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব, এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, এসএ গেমস-২০১৬ ভারোত্তোলনে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট (মার্কেটিং, অনকোলজি ও বায়োটেক ডিভিশন) এসএম মাহমুদুল হক পল্লবসহ আরও অনেকে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে দোয়েল চত্বর, টিএসসি হয়ে আবার শহীদ মিনারে শেষ হওয়া এই সচেতনতামূলক দৌড়ে অংশ নেন আগতরা। সবার অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
হিমু পরিবহনের পক্ষে আহসান হাবিব মুরাদ বলেন, শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের প্রায় ৫০টি স্থানে বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগিতায় ক্যানসার সচেতনতায় র্যালি, আলোচনা সভা, সাইকেল র্যালি, ক্যানসার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ দিনব্যাপী নানা ধরনের কার্যক্রম করেছে হিমু পরিবহন। ক্যানসার সচেতনতায় দৌড়-এর রেজিস্ট্রেশনের অর্থ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটে দান করেছে হিমু পরিবহন।
মেহেদী হাসান গালিব
