বর্তমান সরকার যেসব ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম। বর্তমানে দেশের প্রায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সরকার স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বেসরকারি খাতকে এখানে যুক্ত করেছে। আর বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার অন্যতম মাধ্যম ছিল তাদের কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান। এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে বসে থাকলেও তাদের অনুকূলে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বিধান যুক্ত রয়েছে সংশ্লিষ্ট চুক্তিগুলোয়। এ ধরনের চুক্তি নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ। এমন শর্তের ফলে অনেক কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বিপুল অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ হাতিয়ে নিচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে জনগণের করের অর্থের এমন অপচয় বন্ধ হওয়া আবশ্যক।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘২০২২-২৩ অর্থবছর; বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ ১৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত অর্থবছর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ এক লাফে ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে ব্যয় বাড়লেও এসব কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার কমেছে। স্বাভাবিকভাবে সক্ষমতার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ উৎপাদন করার শর্তে লাইসেন্স দেয়া হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছর সক্ষমতার মাত্র ৩৮ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার না করেই বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ তুলে নেয়া অর্থের অপচয় বৈ কিছুই নয়। তা ছাড়া বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে, তা সরকারি কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব। তা সত্ত্বেও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকদের তদবিরের চাপে বারংবার বাড়ছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ। এমনকি ২০২০ সালের পর এগুলো ধীরে ধীরে সরকারের অনুকূলে নিয়ে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় কমিয়ে আনার কথা থাকলেও তা মান্য করা হয়নি। বর্তমানে দেশে যতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই বেসরকারি খাতে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই এসব কেন্দ্রের অনেকগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজসহ নানা মহল থেকে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে’ ব্যবস্থা চালু করার দাবি তোলা হলেও সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল কোনো কর্ণপাত করেনি। বিদুৎ সরবরাহ না করেই অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ থাকায় অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে। এভাবে জনগণের করের অর্থে কতিপয় করপোরেটের পকেট ভারী করার সুযোগ দেয়া কাম্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ ব্যবস্থায় আশু সংস্কার আনয়ন করা আবশ্যক। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।