ইসমাইল আলী: ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। শুরুর কয়েক বছর ছোট আকারের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীকালে বেসরকারি খাতে আসে বড় আকারের বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নামক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গুনতে হয় মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ। এতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, গত অর্থবছর বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ১৩ হাজার ১৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৫২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ব্যয় বেড়েছে দুই হাজার ৩০২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যদিও এ সময় বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে মাত্র ৭৯ মেগাওয়াট।
সংস্থাটির হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছর শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় (আমদানিসহ) ২৫ হাজার ৬৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল আট হাজার ৪৯০ মেগাওয়াট। বেসরকারি এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয় তিন হাজার ৯০৫ কোটি ৯১ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় ৩১ হাজার ১৬৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জই পরিশোধ করা হয় ১৩ হাজার ১৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, গত অর্থবছর ছোট কয়েকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে গেছে। আর উৎপাদনে এসেছে বড় কয়েকটি আইপিপি। বড় কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সামান্য বাড়লেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট অনেক বেড়েছে।
পিডিবির তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছর জুন শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৯৬৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ছিল আট হাজার ৪১১ মেগাওয়াট। বেসরকারি এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয় দুই হাজার ৮৮৬ কোটি ৭৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় ২০ হাজার ৫৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় ১০ হাজার ৮৫২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
এর আগের অর্থবছর (২০১৮-১৯) দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৪৫৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ৭৪১ মেগাওয়াট। বেসরকারি এসব কেন্দ্র থেকে কেনা হয় দুই হাজার ৭১৩ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ২০ হাজার ৭৮১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল আট হাজার ৭২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
একইভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৪ হাজার ১১৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ২১৩ মেগাওয়াট। বেসরকারি এসব কেন্দ্র থেকে কেনা হয় দুই হাজার ৫২৩ কোটি ৩৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৬৯২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ছয় হাজার ২৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৪ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ৪৫৯ মেগাওয়াট। এ খাত থেকে সে সময় কেনা হয়েছিল দুই হাজার ৪৪৫ কোটি ২৮ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এতে ব্যয় হয় ১৪ হাজার ৭৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৭৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এর আগের (২০১৫-১৬) অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ১৯৪ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৩৭৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল চার হাজার ৪৪৮ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় চার হাজার ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৬ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল চার হাজার ৭১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল তিন হাজার ৬৮৫ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৪৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
আবার ২০১১-১২ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল তিন হাজার ৫৮৩ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল পাঁচ হাজার এক কোটি ২৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২০১১-১২ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৯ হাজার ৯৮৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।