ক্যাবের যুক্তিগুলো আমলে নিন

গতকালের শেয়ার বিজে ‘বিদ্যুতের দাম ১.৩২ টাকা কমানোর প্রস্তাব ক্যাবের’ শিরোনামে ছাপা খবরে সিদ্ধান্তটিকে যুগান্তকারী বলে মন্তব্য জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম। তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ কম। কেননা এ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের কয়েকটি ধারা ও উপধারার আওতায় বিদ্যুতের দাম বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনসহকারে ইউনিটপ্রতি দাম এক টাকা ৩২ পয়সা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। আবেদনটিকে কর্তৃপক্ষও যে গুরুত্বসহকারে নিয়েছে, তা স্পষ্ট। ওই আবেদন জমা হওয়ার পরপরই বৃহস্পতিবার ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) শুনানি চলাকালে ক্যাবের প্রস্তাবের ওপর পৃথক শুনানি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় বিইআরসি। ৫ অক্টোবর শুনানিটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিতর্কে ক্যাব ও বিইআরসি উভয়ের এ অবস্থানকে স্বাগত জানাবেন অনেকে। ইতোপূর্বে কোনো ভোক্তা অধিকার সংগঠনের প্রস্তাবকে বিইআরসি এত ইতিবাচকভাবে নিয়েছে, তেমন নজির সম্ভবত নেই। ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় নিয়োজিত সংগঠনগুলোও কেবল উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা সরকারকে একতরফাভাবে দোষারোপ করে চলেছে, তেমনটিই দেখা গেছে অতীতে। সেদিক থেকে ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় শুনানির গুরুত্ব স্বতন্ত্র, এটা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের প্রত্যাশা, গঠনমূলক আলোচনা হবে এবং ক্যাবের যুক্তিগুলো বিইআরসি বিবেচনা করবে।

ক্যাব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংগঠন। তাদের প্রধান বিবেচনা হলো, ভোক্তা কল্যাণ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের সংগঠনের শক্তিশালী উপস্থিতি কাম্য। কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের উত্থাপিত যুক্তিতর্ক আমলে নেবে, সেটাই প্রত্যাশিত। আর এ আলোকেই বিদ্যুতের দাম হ্রাসে তাদের প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখা উচিত। একই সঙ্গে সামগ্রিক অর্থনীতির সুব্যবস্থাপনা থেকে কর্তৃপক্ষের নজর এড়ানো চলবে না।

বিদ্যুতের দাম হ্রাসে সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে ক্যাব। সেগুলো অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রস্তাবে রয়েছে প্ল্যান্টগুলোর জ্বালানি দক্ষতা বাড়িয়ে তোলার কথা। জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ও দাম কমবে, এটা সরল অঙ্ক। প্রশ্ন হলো, যত উদ্যোগই নেওয়া হোক, আচমকা কিংবা স্বল্প সময়ে দক্ষতাটিকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব কি না। আবার কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি উৎস পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, ওগুলোর প্রাথমিক উৎস বদলালে অনেকটাই কমবে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়। দুর্ভাগ্য, এসবের ওপর বিইআরসিরই নজরদারি করার কথা। কিন্তু কাজটি করতে হচ্ছে ক্যাবকে। তবে যেহেতু ইস্যুটি উঠলই, এর সুরাহায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সক্রিয় ভ‚মিকায় দেখতে চাইবেন সবাই। অবশ্য ভোক্তা কল্যাণের পাশাপাশি জোর দিতে হবে বিশেষত জ্বালানি খাতের সুব্যবস্থাপনা ও সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ওপর। আমাদের জ্বালানি উৎসে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যুক্ত হতে যাচ্ছে নাকি দ্রæতই। এদিকে আমরা যে বাজার থেকে এলএনজি কিনতে যাচ্ছি, সেখানে দাম চড়া। ফলে এমন অনুমান অযৌক্তিক হবে না, এলএনজি যুক্ত হলে বিদ্যুতের দামে বড় ধরনের সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারেÑস্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও। এখন আগে থেকে এর দাম সমন্বয়ের কাজটি যদি এগিয়ে রাখা না হয়, তাতে সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলাটি ঝুঁকির মুখে পড়ার সমূহ শঙ্কা। সুতরাং ক্যাবের যুক্তিগুলো আমলে নেওয়া হোক এবং একই সঙ্গে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার প্রতি রাখা হোক দৃষ্টি এটাই সবার প্রত্যাশা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০