ক্যামবেল হাঁস পালনে সফল তিন বন্ধু

আলমগীর হোসেন: যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধা-বিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন

বগুড়ার শাজাহানপুরে নদীতে ক্যামবেল হাঁসের পালন করে সফলতার মুখ দেখতে চলেছেন বেকার তিন যুবক। সম্পর্কে তারা তিন বন্ধুও বটে। লেখাপড়ার পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারে সহযোগিতার প্রয়াস নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আশা তাদের।

উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়ার ছাবেদ আলীর পুত্র বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা ২৪ বছরের নয়ন ইসলাম। একই কলেজ ও গ্রামের ইমান আলীর পুত্র অনার্স শেষবর্ষের ছাত্র আরিফুল ইসলাম। সে সবার বড়। একই গ্রামের আবু জারের পুত্র ডেমাজানী ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা। বয়সে নয়নের চেয়ে এক বছরের ছোট সে।

আত্মপ্রত্যয়ী এ তিন বন্ধু ঝুঁকি নিয়ে ধারদেনা করে মূলধন সংগ্রহ করে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুরু করেছেন তাদের প্রকল্প। করতোয়া নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলেন ক্যামবেল হাঁসের খামার।

নদীর পাড় ঘেঁষে একখণ্ড জমির ওপর গড়ে উঠেছে ছয় শতাধিক ক্যামবেল হাঁসের এ খামার। সারাদিন করতোয়া নদীতে ভেসে বেড়ায় এগুলো। নানা জলজ উদ্ভিদে উদরপূর্তি শেষে সন্ধ্যায় খামারে ফেরার দৃশ্যটা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এর পাশাপাশি দুবেলা বাড়তি খাবারও দিতে হয় তাদের। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে থাকেন খামারিরা।

নয়ন জানান, স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যই আমরা হাঁসের খামার করি। পরিচিতজনদের উৎসাহ আর পরামর্শ আমাদের বেশ উপকার করেছে।

উপজেলার গোবিন্দপুর, ইটালী, কাহালুর মালঞ্চাসহ বিভিন্ন এলাকার খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ নেন তিন বন্ধু। প্রথমে করতোয়া নদীর পাড় ঘেঁষে নিজেদের জমিতে টিনশেড নির্মাণ করা হয়। এরপর ২৪ হাজার টাকায় এক দিনের সাতশ ৬৫ পিস ক্যামবেল হাঁসের বাচ্চা কেনেন। নিয়ম অনুযায়ী ১৭ দিন বয়সে পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয় বাচ্চাদের। এক থেকে ২৩ দিন বয়স পর্যন্ত নদীর প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি দুবেলা হালকা খাবার দেওয়া হতো এদের। ২৩ দিন পর থেকে গম, ভুট্টা, গুঁড়া, মিটবন জাতীয় বাড়তি দানাদার খাবার দেওয়া হয়। বর্তমানে হাঁসের বয়স তিন মাস। চিকিৎসা ও খাবারের পেছনে প্রতিদিন প্রায় ১২০০ টাকা খরচ হয়।

একদিনের বাচ্চা কেনার প্রথম ১০ দিনে মারা যায় ৫০টি। ৩৫ দিন বয়সে প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ৩৭ থেকে ৩৯ দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ১৬টি হাঁস মারা গেলে অসুস্থ একটি হাঁস নিয়ে বগুড়া সদর পশু হাসপাতালে যান তারা। তখন পশু বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুল ইসলাম, ‘ডাক প্লে’ রোগের কথা বলেন। পুনরায় ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি এও বলেন যে, ভ্যাকসিন দেওয়ার পর যদি বেঁচে যায় ভালো, না হলে সব হাঁস মারা যাবে। তার পরামর্শে ৪০ দিন বয়সে পুনরায় হাঁসগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। রাতে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ভোরে মারা যায় আরও ৬০টি হাস। এতেও ভীত না হয়ে অক্লান্ত পরিচর্যা চালাতে থাকেন তারা। বর্তমানে ছয়শটি হাস সুস্থ ও সবল রয়েছে।

ছয়শ হাঁসের মধ্যে পুরুষ হাঁসের সংখ্যা ৮০। চার মাস বয়সের পর বাকি ৫২০টি হাঁস একসঙ্গে ডিম দেওয়া শুরু করবে। একটানা ছয় মাস ডিম দেবে। এরপর দুই মাস ডিম দেওয়া বন্ধ থাকবে। দুই মাস পর পুনরায় ডিম পাড়া শুরু করে আবার পাঁচ থকে ছয় মাস পর্যন্ত দিতে থাকবে। এভাবে দুই বছর ডিম দেবে তারা। প্রথম ছয় মাসের ডিম বিক্রি করে যে টাকা আসবে তাতে পুরা খরচের টাকা উঠে আসবে। পরবর্তী পাঁচ থেকে ছয় মাসের ডিমের টাকা ও হাঁসের দাম উদ্বৃত্ত থাকবে। এতে প্রায় আট লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে বলে আশা তাদের। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা পেলে খামারটির কলেবর আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তারা।

বগুড়া

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০