অদ্ভুত পৃথিবী, বিচিত্র মানুষ! দেশ, কাল, জাতিভেদে রয়েছে মানুষের শারীরিক, মানসিকসহ বিভিন্ন রকমের মিল-অমিল। একে অপরকে জানার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সময়, অনুকূল পরিবেশ, একে অপরের প্রতি একনিষ্ঠ আন্তরিকতা। সে ধারাবাহিকতা ঘিরে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মাঝে মাঝে বসেন ক্যাম্পাস আড্ডায়। জানার চেষ্টা করেন প্রিয় বন্ধুটিকে আরও নতুনভাবে। বন্ধুত্বের বন্ধনকে নিগূঢ় রূপ দিতে ক্যাম্পাসে আড্ডার বিকল্প নেই। তবে হ্যাঁ, আড্ডার ধরনে ভিন্নতা রয়েছে। আর তাই গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ছাত্রজীবনের একটা অপরিহার্য বিষয় হলো ক্যাম্পাস আড্ডা।
আড্ডাবাজদের জন্য ক্যাম্পাসে আছে অনেক জায়গা। আড্ডার প্রধান জায়গাগুলোর মধ্যে আছে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, মিডিয়া চত্বর, ওয়াইফাই কর্নার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বাদামতলা কিংবা ফুচকা চত্বর। একটু অবসর পেলে দল বেঁধে ছুটে আসেন শিক্ষার্থীরা। আড্ডায় মেতে ওঠেন তারা। বন্ধুর মন পেতে, বন্ধুত্বকে জয় করতে আড্ডার কোনো প্রসঙ্গ জানা নেই তাদের।
ক্যাম্পাস আড্ডা মূলত ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা
সাহিত্য-সাংস্কৃতিসহ গঠনমূলক আলোচনাও হয়। এছাড়াও অনেক সময় হাস্যরসের আড্ডাও হয়।
সেদিন আড্ডার কোনো এক সময় হঠাৎ করেই যেন ইংরেজি বিভাগের ২৪তম ব্যাচের সাগরের গলায় বেজে ওঠে ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’, ‘হতেও পারে এই দেখা শেষ দেখা…’, ‘এই গান শেষ গান’-এর সুর। কিংবা একই ব্যাচের লালিতের আলতো-আভায় সাজানো কবিতার দু-চার লাইন। এ প্রসঙ্গে সাগর বলেন, ক্যাম্পাস আড্ডা মানে বন্ধুর গানের সুরে তাল মেলানো, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ‘আহা’ বলে ওঠা। গিটারের তালে তাল রেখে নতুন দিনের হাসিমাখা গান করা। তবে হ্যাঁ স্কুল-কলেজের আড্ডার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আড্ডার বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আড্ডা মানে রং-তুলি আঁচড়। এ আঁচড়ের সীমারেখা নেই, নেই কোনোরূপ দ্বিধাময়ী বন্ধুর-পথ। ক্যাম্পাস আড্ডা একে অপরকে জানার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দরকার। এ আড্ডার মধ্য দিয়ে প্রতি মুহূর্তে নতুন করে ক্যাম্পাস ও এর প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাই।
আবার মাঝেমধ্যে মিলনের চুপটি করে বসে থাকাও লক্ষ্য করা যায়। মিলনের মতে, ক্যাম্পাস আড্ডা আর বন্ধুত্ব! পরীক্ষার হলে আশার একমাত্র অবলম্বন। আর পরীক্ষায় খারাপ করলে সহানুভূতির হাত। পরীক্ষায় ভালো করার একমাত্র সহজ উপায় ক্যাম্পাস আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নেওয়া।
একদিন ক্যাম্পাস আড্ডার সমাপ্তি হবে, টিকে থাকবে বন্ধুত্ব। নতুনদের দিয়ে আবারও গড়ে ওঠে সেই চিরচেনা পরিবেশ, একে অপরকে চেনার অটুট বন্ধুত্ব-বাঁধন। যেখানে পুরোনো সেই আড্ডা আবার নতুনরূপে জেগে ওঠে সাবা, মুহিবুল, আফরিন, রকিবুল, সামিরাদের আগমন-বার্তায়।
মোহাম্মদ রনি খাঁ
