আবু সাঈদ সজল, রাবি: ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয়বারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। সে নিয়োগের চার বছর শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৭ মে। অন্যদিকে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলছে আগামী ১৭ মে। এর পর ২৪ মে ক্লাস শুরু।
এ হিসাবে ক্যাম্পাস খুললেই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন নতুন উপাচার্য। এরইমধ্যে নতুন উপাচার্য নিয়ে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়টি খুললেই সিদ্ধান্ত আসবে কে হচ্ছেন রাবির নতুন অভিভাবক।
১৯৭৩ সালের আইনে পরিচালিত চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট কর্তৃক তিনজনের একটি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচিত হয়। সেখান থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেন চ্যান্সেলর, অর্থাৎ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তবে গত কয়েক দশক ধরে সিনেট গুরুত্ব না পাওয়ায় ব্যক্তিপর্যায়ের যোগাযোগ ও তদবির উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে বেশি কার্যকরী হয়েছেন বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তাই গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নিয়োগ পেতে ইতোমধ্যে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও কার্যালয়ে তদবির-লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করার খবরও ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদটিতে আসীন হতে প্রতিযোগিতার দৌড়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষককের নাম আলোচনায় থাকলেও নির্দিষ্ট করে বলতে নারাজ সবাই।
তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে উপাচার্য পদের জন্য সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেনÑরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. জিনাত আরা, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী সরওয়ার জাহান, বাংলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক শফিকুন্নবী সামাদী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নব-নির্বাচিত আহ্বায়ক প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপাচার্যের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক আন্দোলনের আহ্বায়ক ও ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুলতান উল ইসলাম টিপু।
উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, নিয়ম হলো সিনেটের মাধ্যমে নির্বাচিত উপাচার্য প্যানেল থেকে নিয়োগ দেয়ার। তবে এখন বিভিন্ন কারণে সেটি হচ্ছে না।
শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বর্তমান সময়ে সরকার যাকে ভালো মনে করে তাকেই এ পদে নিয়োগ দেয়। এখানে নির্দিষ্ট কোন মানদণ্ড মানা হয় না। রাষ্ট্রপতি ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১১(২)ধারা অনুযায়ী এ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ওই ধারায় বলা হয়েছে, যদি ছুটি, অসুস্থতা, পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হয়, তবে আচার্য তা পূরণ করবেন।
এদিকে গত বুধবার প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ নির্বাচন বর্তমান উপচার্জ সমর্থক শিক্ষকরা আহ্বায়কসহ চারটি পদে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে তাদের বিরোধীরা বাকি সব পদে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের এ ফল উপাচার্য নিয়োগে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তারা নিয়োগের বিষয়টা নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করে। কমিটির নির্বাচনের সঙ্গে এর তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। তবে অনেক সময় যারা আহ্বায়ক নির্বাচিত হয় তাদের নাম উপাচার্য পদপ্রত্যাশীদের তালিকায় থাকে বলে জানান তিনি।