নিজস্ব প্রতিবেদক : গত কয়েক বছরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়েছে। দেশটির মুদ্রা ব্যবস্থাকে ক্যাশবিহীন করে ব্যাংকিং চ্যানেলে গতি আনা হয়েছে। গত তিন বছরে ৩০ কোটি নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের মূল্যের ওপর ভর্তুকি না দিয়ে বাজার মূল্যেই পণ্য কিনতে বলা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাবে সরাসরি ভর্তুকির অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সরাসরি সুবিধা পেয়েছে। আর সার্বিকভাবে ক্যাশনির্ভরতা জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে স্বচ্ছতা এনেছে।
ঢাকায় সফররত ভারতের অর্থ ও করপোরেটবিষয়ক মন্ত্রী অরুণ জেটলি তার বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘ভারত সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ’বিষয়ক গণবক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। ভারতীয় হাইকমিশন ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) যৌথভাবে এ বক্তৃতা আয়োজন করে।
এ সভায় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পিআরআই’র চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ছাড়াও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) ও ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
অরুণ জেটলি তার বক্তব্যে বলেন, তিন বছর আগেও ভারতে অনেকটা ক্যাশনির্ভর অর্থব্যবস্থা ছিল। এখন সেখান থেকে আমরা স্বল্প ক্যাশের দিকে এগোচ্ছি। ভারতের ৪২ শতাংশ লোকের কোনো ব্যাংক হিসাব ছিল না। সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলে এ সময়ে ৩০ কোটি নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা গেছে। কিন্তু তখন দেখা গেল এসব ব্যাংক হিসাবের ৭৮ শতাংশেই কোনো অর্থকড়ি নেই। মাসে এক রুপি করে জমা করার জন্যও সরকার ব্যবস্থা করেছে তখন।
এসব হিসাবে অর্থ জমা বৃদ্ধি করার জন্য সরকার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। আগে সরকার বিভিন্ন গ্যাস, জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্যে ভর্তুকি দিত। কিন্তু তাতে সত্যিকারের গরিবরা বঞ্চিত হতো। দেখা যেত যে, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরাই ভর্তুকির সুবিধা নিচ্ছে। আমরা পণ্যের মূল্যে ভর্তুকি না দিয়ে গবির নাগরিকদের অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ দেওয়া শুরু করি। ফলে ওই হিসাবগুলো সচল হয়। আর বাজারে পণ্যমূল্য উম্মুক্ত হয়ে যায়। সঠিকভাবে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শনাক্ত করার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার (জনধন), জাতীয় নাগরিক পরিচয় নাম্বার (আধার নাম্বার) এবং মোবাইল নাম্বারের ডেটাবেসকে সম্মিলিত জিজিটাল ব্যবস্থার (জেএএম) আওতায় আনা হয়। ফলে প্রকৃত আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী দরিদ্রদের বাছাই করতে অসুবিধা হয়নি।
ভারতের অর্থমন্ত্রী বলেন, আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার জন্য বিদেশে জমানো অর্থকে ট্যাক্সের বিনিময়ে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ক্যাশ অর্থকে ব্যাংকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় গত বছর। এতে ক্যাশনির্ভরতা কমে গিয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থায় ফিরেছে দেশের অর্থব্যবস্থা, হঠাৎ করেই করদাতা বেড়েছে এবং বামপন্থি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে অর্থায়ন কমে গেছে। ফলে দেশের মোট জাতীয় আয় (জিডিপি) পরিচ্ছন্ন ও প্রশস্ত হতে পারছে। সার্বিকভাবে দেশে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক ব্যবস্থা সুশাসনকে গতিশীল করেছে।
এর আগে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বক্তব্যে বলেন, অর্থনীতি সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরি। উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা আমরা দেখে আসছি তার মধ্যে অসম্ভব গতি এনেছে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব। দুর্নীতি রোধের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে একটা মুখ্য হাতিয়ার। এর ফলে ব্যবসা ও সেবার গতি বেড়েছে, খরচ কমেছে।
ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পিআরআই’র চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, নানা রকম জটিলতা ও বাধা থাকা সত্তে¡ও ভালো একটা নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা ভারতীয় অর্থনৈতিক সংস্কারের এ অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আছে বাংলাদেশের। ভারতীয় অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বৈশ্বিক সংকটের সঙ্গে সঙ্গে ভারতেও প্রবৃদ্ধিতে নিম্নমুখী অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংস্কার প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় ভ‚মিকার মাধ্যমে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটবে বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়নের পাশাপাশি দুদেশের যোগাযোগ ও বাণিজ্যেও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অরুণ জেটলি বক্তব্যের আগে দুই দেশের অর্থমন্ত্রী ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঢাকার নতুন শাখা উদ্বোধন করেন। তারা এ সময় ভারতীয় স্টেট ব্যাংক পরিচালিত ১২টি ভিসা কেন্দ্রে ক্যাশবিহীন ভিসা আবেদন ব্যবস্থারও উদ্বোধন করেন।
Add Comment