নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর সঙ্গে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে বুধবার রাজধানীর গুলিস্তান, ফকিরাপুল ও বনানীর চারটি ক্যাসিনোতে (জুয়ার আসর) অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দেয় র্যাব। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কিছু নেতা দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ ক্যাসিনো চালিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে একটি চালাতেন আওয়ামী যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বুধবার গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত অন্য নেতারা গা-ঢাকা দেন। তবে চার ক্যাসিনো থেকে বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার, ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা ১৮২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ক্যাসিনোতে অভিযান নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ক্যাসিনো চলার বিষয়টি পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানতেন বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। না জানাটা ব্যর্থতা কি না, আর জেনে যারা নিশ্চুপ ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গোয়েন্দারাই আমাদের তথ্য দিয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে অপারেশন শুরু হয়েছে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি কলাবাগান ও কারওয়ান বাজারের দুটি ক্লাবে অভিযানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘অভিযানে ওই ক্লাব দুটির অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আপনারা তৎপর হয়েছেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পরিষ্কার। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতি আমরা অনুসরণ করছি। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দেন, সেভাবে আমরা কাজ করছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসনের কেউ যদি এখানে জড়িত থাকেন বা কারও বিরুদ্ধে যদি সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা বিচারের মুখোমুখি হবেন। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনোসহ নানা ধরনের জুয়া চলে আসছিল। দেশের প্রচলিত আইনে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড হলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যুক্ত থাকায় সেগুলো বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগর যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের চার দিনের মাথায় গতকাল অভিযান পরিচালিত হলো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘শুধু ক্যাসিনো নয়, সব অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। আমরা বিভিন্ন বারের যেমন লাইসেন্স দিয়ে থাকি, তেমনি ক্যাসিনো চালাতে গেলেও সরকারের অনুমোদন লাগবে। যারা এ ব্যবসা করছে, তারা সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়নি। তারা অবৈধভাবে এ কাজটি চালাচ্ছিল। সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।’
অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে আটক যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার টর্চার সেলের খোঁজ পাওয়া গেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে ব্যাপারেও তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ক্যাসিনো চালানো ইয়ংমেন্স ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। এ বিষয়ে তার ভূমিকা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কে কতখানি জড়িত, সেটা তদন্তের ব্যাপার। তদন্ত শেষে এসব বিষয়ে বলা যাবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তার নিজস্ব বক্তব্য।’

Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:49 am
ক্যাসিনোর সঙ্গে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দিনের খবর,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: